


গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে তড়কা রোগ (অ্যানথ্র্যাক্স)। পশুবাহিত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। এ উপসর্গ নিয়ে মারাও গেছেন মোছা. রোজিনা বেগম নামের এক নারী। কিন্তু সে তুলনায় নেই সচেতনতা ও চিকিৎসা। ফলে চরম উৎকন্ঠা আর উদ্বিগ্নে দিন কাটছে সুন্দরগঞ্জবাসীর। তথ্যে জানা যায়, গবাদিপশুর অ্যানথ্র্যাক্স মোকাবেলায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে কিছু কিছু এলাকায়। সচেতনতা বাড়াতেও চলছে প্রচার প্রচারণা। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ৮০ পয়সায় ভ্যাকসিন এখনো ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
৯০ শতাংশ গবাদিপশু এখনো ভ্যাকসিনের বাহিরে আছে। এ পর্যন্ত ১৩ টি গরু অ্যানথ্র্যাক্সে মারা গেছে। তবে গবাদিপশুর মালিকদের দাবি মৃত গরুর সংখ্যা শতাধিক। এ উপসর্গ নিয়ে এক মহিলা মারা গেছেন। সরকারের হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ জন হলেও ৫০ ছাড়িয়েছে দাবি সচেতন মহলের। এদিকে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অ্যানথ্র্যাক্সের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকদের কাছে। আবার কোনো কোনো চিকিৎসক এ উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করছেন। এমতাবস্থায় চরম আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের (ফলগাছা) ইউপি সদস্য মো ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘এ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে কেবলমাত্র সচেতনতা। কিন্তু সে ধরনের কোনো কার্যকর ভূমিকা এখনো দেখছি না। সচেতনতায় এ পর্যন্ত কোনো মিটিং, আলোচনা বা মাইকিংও শুনিনি। পশু হাসপাতালের কোনো লোককেও আমার ওয়ার্ডে দেখিনি। বা কেউ বললোও না যে, আমি পশু হাসপাতাল থেকে আসতেছি। আপনি সহযোগিতা করেন।’ বেলকা ইউনিয়নের জহুরুলের মোরস্থ পল্লী চিকিৎসক মো আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ নিয়ে আসা ৪ জন অসুস্থ ব্যক্তিকে পরামর্শ দিয়েছি। তাদের কেউ সহজে স্বীকার করেননি। তথ্য পেতে রাগারাগিও করেছি অনেকের সাথে। লজ্জা এবং ভয় দু’টোই দেখেছি তাদের চোখে মুখে।
অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মোছা. রোজিনা বেগমের ছেলে মো. রইসুল মিয়া। তিনি চিকিৎসকদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘অসুস্থ মাকে গত শনিবার (৪ অক্টোবর) সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। আমার মাকে কোনো ডাক্তার বা নার্স ছোঁয়নি। ডাক্তার এসে দূর থেকে ছবি তুলেছেন। ছেলেপেলেদের দিয়ে প্রেসার মাপিয়েছেন। কিন্তু মাকে নাড়ানাড়ি আমরাই করেছি। পরে ফোঁড়া স্যালাইন ও অক্সিজেন দিয়ে রংপুর নিতে বলেন। একজন রোগীর সাথে ডাক্তারের যে আচরণ হওয়া দরকার সেটি আমরা পাইনি। সম্ভবত তারা এ রোগকে ভয় অথবা ঘৃণা করেছেন।’ বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, আমার ইউনিয়নে অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ নিয়ে এক মহিলা মারা যাওয়ার পর থেকে গবাদিপশুর ভ্যাকসিন দিচ্ছে জোরেসোরে। তবে জনবল কম হওয়ায় আগাতে পারছেন না। জনবল আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কারো শরীরে অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ দেখা দিলেও তারা শরম বা ভয়ে গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এ ধরনের উপসর্গ যে ভয়ের কিছু না সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আরও প্রচারণা চালানো দরকার বলে মন্তব্য করেন এ ইউপি চেয়ারম্যান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক মো. রইসুল মিয়ার অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বরং ওই সময়ে মেডিকেল আবাসিক অফিসার ও ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার দু’জনে তার মাকে দেখেছেন। যদি নাই দেখতো তাহলে চিকিৎসা দিলো কীভাবে। বরং তার মা মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তারাই পাত্তা দেয়নি আমাদের।’
এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিপ্লব কুমার দে’র সাথে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ২৪ হাজার গবাদিপশুকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। মজুদ আছে ভ্যাকসিন। আরও এক লক্ষ চেয়ে আবেদন করেছি। খুব দ্রুত সময়ে সেগুলো পাবো। এখনো কোনো কোনো এলাকায় ভ্যাকসিনেটর পৌঁছায়নি এমন প্রশ্নের জনাবে বলেন, জনবল কম। তাছাড়া নির্দেশনা আছে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সে ভাবেই কাজ চলছে। প্রচার প্রচারণা চলছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, অসুস্থ গরু জবাই করার কারণে একজনকে ভ্রাম্যমাণ দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১৮ টি গরুকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সেগুলো এখন সুস্থ আছে বলেও জানান তিনি।