দীর্ঘ ১ বছর চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। পৌরসভাটিতে ব্যয়ের তুলনায় আয় অনেক কম তাই বেতন ভাতা দিতে এমন সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পৌরসভা সূত্রে জানাগেছে, ১৯৮৩ সালে ১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার গৌড়ী পাড়া এলাকায় ৬৪ শতক জমির উপর প্রথমে (গ) শ্রেনীভুক্ত ফুলবাড়ী পৌরসভাটি স্থাপিত হয়। এরপর ২০১৫ সালে ২১শে সেপ্টেম্বর (ক) শ্রেনীতে উন্নীত হয়, বর্তমানে এটি একটি মডেল পৌরসভা। ১৩ দশমিক ৫৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে জনসংখ্যা রয়েছে ৫৫হাজার ৮৫০জন। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের এর আয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৯২লাখ ২হাজার ৪৬৭ টাকা। বেতনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬হাজার ৭১০টাকা। এখানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বছরে বেতন বাবদ দিতে হয় প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বছরে ৫২ লাখ ৬৪ হাজার ২৪৩ টাকা ঘাটতি। এখানে কর্মরত স্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে ৩৫জন। অস্থায়ী কর্মচারী রয়েছে ১৬জন। পৌরসভার ওই আয়ের উপর নির্ভর করেই তাদের বেতন ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে।
স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ১জন, নির্বাহী প্রকৌশলী ১জন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ২জন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ১জন, লাইসেন্স পরিদর্শক ১জন, সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শক ১জন, সহকারী কর আদায়কারী ২জন, কার্য সহকারী ১জন, কোষাধ্যক্ষ ১জন, হিসাব সহকারী ১জন, সেনেটারী ইন্সপেক্টর ১জন, উচ্চ মান সহকারী ১জন, স্টোর কিপার ১জন, নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক ১জন, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি ১জন, বৈদ্যুতিক হেলপার ১জন, সড়ক বাতি পরিদর্শক ১জন, টিকাদান সুপার ভাইজার ১জন, টিকাদানকারী ৩জন, হেলথ্ ভিজিটর ২জন, রোলার চালক ১জন, গাড়ী চালক ১জন, হেলপার ১জন, এমএলএসএস ৫ জন, নৈশ্য প্রহরী ১জন এবং লাইনম্যান ১জন রয়েছে। তাদের সকলের বেতন ভাতা পৌরভার ওই আয়ের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু পৌরসভাটিতে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় সময়মত বেতন পাচ্ছেন না তারা।
দীর্ঘ ১ বছর চার মাস ধরে বেতন না পেয়ে ফুলবাড়ী পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে রয়েছেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, পৌরসভার বেতন যতটুকু পাই, তা দিয়ে প্রতিমাসে চাল ডাল কিনে আমাদের সংসার চালাতে হয় এবং বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে হয়। এছাড়া কারো কারো ঘরভাড়াও দিতে হয়। ১৬ মাস ধরে বেতন বন্ধ হওয়ায় এখন ধার দেনা করে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দোকানিরাও বাঁকি দিতে অনিহা প্রকাশ করছে। এভাবে আর কতদিন ধার দেনা করে চলবে আমাদের ? তারা বলেন, প্রশাসক মহোদয় চেষ্টা করছেন আশা করছি তিনি বেতনের ব্যবস্থা করবেন।পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আলী জানান, বেতনের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি শীঘ্রই বেতন পরিশোধ করবেন মর্মে আশ্বস্ত করেছেন।
এদিকে গণঅভ্যুথানের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পৌরসভার মেয়রদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলে ১৯শে আগষ্ট ফুলবাড়ী পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরীকে। বিষয়টি নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, যেহেতু আমি অল্প কিছুদিন হল প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েছি। সবকিছু গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে। তবে আশা করছি আগামী পূঁজোর আগেই কয়েক মাসের বেতন দেয়া হবে।