1. onlinesokalerbani@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. iqbalbarabil80@gmail.com : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. sharifuzzamanmdiqbal@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
সীমান্তে নারীদের সংগ্রাম জীবন কাটে বঞ্চনায়   | দৈনিক সকালের বাণী
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন

সীমান্তে নারীদের সংগ্রাম জীবন কাটে বঞ্চনায়  

মিঠু মুরাদ, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট)
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৭৭ জন দেখেছেন
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী আঙ্গরপোতা, বঙ্গেরবাড়ি, নাজির গুমানি, ঝালঙ্গী কিংবা কিশামত নিজ্জমা-এমন অসংখ্য গ্রাম আছে সীমান্ত এলাকার পরিবার গুলোর নারীদের জীবন চলছে নানা ধরণের বঞ্চনার মধ্যে। নারী হওয়ায় তাদের দিন কাটাতে হয় নানামুখী প্রতিক‚ লতায়। বয়ঃসন্দিকাল থেকে বিয়ে, সন্তান ধারণসহ সংসার জীবনে পথে পথে বঞ্চনার শিকার সীমান্ত এলাকার নারীরা। বিভিন্ন সীমান্ত ঘুরে দেখা গেছে এসব চিত্র।
পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলা সদর থেকে সীমান্তবর্তী গ্রাম-এলাকা গুলো অধিকাংশ ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে। পাটগ্রাম উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের প্রতিটির সাথে ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তবর্তী গ্রাম এলাকা সমূহে ৪০ থেকে ৫০ হাজার পরিবারের বসবাস। অধিকাংশ পরিবার কৃষক। এসব পরিবারের নারীরা প্রায় সবাই গৃহিনি।
শিক্ষা
শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গী পকেট সীমান্তবর্তী এলাকায় কথা হয়েছিল মমিনা বেগমের সাথে তিনি বলেন, এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো গ্রাম থেকে গড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫ এবং কলেজ ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিশেষ করে বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলেরা পথ মাড়িয়ে যাতায়াত করতে পারলেও মেয়েদেরকে পড়তে হয় নানান সমস্যায়। দূরের পথ আর পরিবারের মেয়ে সন্তান হওয়ায় অনেক পরিবার মেয়ে সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারি না। অনেক সময় পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব কারণে সীমান্তে বসবাসরত পরিবার সমূহের নারী শিক্ষার হার কম।
২০১১ সালের জেলা শুমারি অনুসারে পাটগ্রাম উপজেলায় সাক্ষরতার হার ৪৬ শতাংশ। তবে এর মধ্যে নারীদের হার কত, সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো চিত্র নেই।
বাল্যবিবাহ ও স্বাস্থ্য চিত্র 
দেশের অন্যান্য এলাকার মত সীমান্ত এলাকার মেয়েরা বেড়ে ওঠায় সমান সুযোগ পায়না। ২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের এসডিজি প্রতিবেদন বলছে, পাটগ্রামে অতি কম ওজনের শিশুর হার ৮.৬। এ তথ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে পাটগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের দারিদ্র্যের চিত্র। ফলে বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক পরিবর্তনের যে আলাদা গুরুত্ব আছে, এখানকার কিশোরীদের সে বিষয়ে সচেতনতা নেই বললে চলে।
নিরাপত্তার অভাব ও দারিদ্র্যের কারণে এখনো এসব এলাকার পরিবারগুলোতে ছেলেদের কদর বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবে মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার বেশি এই এলাকায়। মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি ছেলেদের তুলনায় বেশি বলে বয়স যা-ই হোক, বিয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করা হয় কৈশোর উত্তরণের আগে।
বুড়িমারী ইউনিয়নের মুগলিবাড়ী সীমান্ত এলাকার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে মোস্তাকিনা আক্তার বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত এলাকার বেশীরভাগ রাস্তা কাঁচা। ইজিবাইক, অটো ভ্যান গাড়িতে যেতে হয়। প্রতিদিন স্কুল কলেজে যাওয়া সম্ভব হয়না। বর্ষাকালে সমস্যা বেশি হয়। আমাদের এলাকা থেকে কলেজ ১৩ কিলোমিটার দূরে। আমাদের মেয়েদের পড়ালেখা করতে যাওয়া-আসাসহ অন্যান্য সমস্যা হয়।’
সীমান্তে সংসার
বুড়িমারী ইউনিয়নের বর্মতল সীমান্ত গ্রামের গৃহবধূ লিপি বেগম। ৪০ বছর বয়সের লিপি বলেন, ‘শরীর অসুস্থ হলেও কোনো উপায় থাকে না, সংসারের কাজ করতেই হয়। অসুস্থ হলে চিকিৎসা মেলে না। অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হলেও কিছু করার থাকে না।’
সীমান্তবর্তী গ্রাম-এলাকার নারীরা নায্য অধিকার থেকে বরাবরই বঞ্চিত। সংসারের সম্পত্তি, জমি-জায়গায় নারীদের অধিকার দেওয়া অনেক কম। স্বামী ও ছেলে সন্তানের নামে যত সম্পত্তির দলিল করা হয়। এতে নারীদের নামে করা হয় যৎসামান্য। সংসারের বিভিন্ন আয়ে নারীদের টাকা বা ভাগ নেওয়ার সুযোগ থাকেনা। স্বামী বা ছেলে সন্তান যা দেয় তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। নিজ ইচ্ছায় কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারে না। পোষাক-পরিচ্ছদও নিজের মনমত কিনতে পারেন না। নারীর পরিশ্রমের বিপরীতে যে তাঁর (নারীর) যে অধিকার তা কখনোই দেওয়া হয়না। এসব এলাকার নারীরা কখনো একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নিজ ইচ্ছেতে কোথাও বেড়াতেও যেতে পারেন না।
কুচলীবাড়ী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকার গৃহিনি লিভা বেগম বলেন, ‘নায্য অধিকার নারীরা কোথায় পায়। সব জায়গায় আমরা অবহেলিত। স্বামী, সন্তানের নামে সম্পত্তি বা জমি বেশি লেখা হয়। আর যা কাগজে পত্রে থাকে সেগুলো তো ভোগ করার ক্ষমতা/সুযোগ থাকেনা। স্বামী, সন্তানই দেখাশোনা বা চাষাবাদ করে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ইউনিয়ন সমূহের হাট-বাজার থেকে উপজেলা সদরে যাতায়াতের আঞ্চলিক মূল সড়ক পাকা হলেও প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকায় চলাচলের বেশকিছু ফাঁড়ি রাস্তা কাঁচা। এসব সড়ক দিয়ে জরুরী রোগী, কৃষিপণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয় সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত পরিবার গুলোকে।
এদিকে প্রযুক্তির ব্যবহারেও পিছিয়ে সীমান্তবর্তী গ্রামের নারীরা। পরিবারের প্রধান স্বামী বা ছেলের হাতে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। তাতে যুক্ত ইন্টারনেট। বেশির ভাগ নারীর হাতে মোবাইল ফোন নেই। কারও কারও হাতে আছে বেসিক ফোন।
সীমান্তে ঝুঁকি
সীমান্তবর্তী এলাকার নারীরা ভারী কাজ করার পাশাপাশি সীমান্তের সন্নিকট কৃষি জমি গুলোতে চাষাবাদের সময় কাজ করেন। গরুসহ বিভিন্ন সামগ্রী পাচার রোধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি ছোড়ে। অনেক সময় তারা সীমান্ত অতিক্রম করে গ্রামে ঢুকে পড়ে। পুরুষেরা দ্রুত সরে পড়লেও নারীদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না।
শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ভিতরবাড়ী সীমান্ত এলাকার গৃহবধু গলেজা বেগম (৪২) বলেন, ‘সীমান্তে পরিবার নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদেরকে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকি। বিভিন্ন এলাকা থেকে চোরাচালানি ব্যক্তিরা এসে সীমান্তে যায়, অপরাধ করে। এতে ভারতের বিএসএফ আমাদের ঘরের পাশে ও আঙ্গিনায় (উঠানে) আসে। বিভিন্ন ভাষায় গালাগালি করে চলে যায়। অনেক সময় সীমান্তের জমিতে কাজ করি ওই সময়ও বিএসএফ লাঠি এবং বন্ধুক দেখিয়ে কথা বলে এসবে আমাদের নারীদের খুব ভয় হয়।’
সরকারি সংস্থার ভূমিকা 
পাটগ্রাম উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব)- নাছিমা পারভীন বলেন, ‘মেয়ে ও নারীদের যে কোনো প্রতিক‚ লতা, সমস্যা জানতে পারলে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করি। প্রকৃতপক্ষে নারীরা বিভিন্নখানে সমস্যার মুখোমুখি হয়। সীমান্ত এলাকার পরিবার গুলোতে একটু বেশি হয়। নারী বা মেয়েদের অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোনো কিছু বাধা হতে পারবে না।’
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় কোন মেয়ে বা নারী যদি এ রকম কোন প্রতিফলতার শিকার হয়ে থাকে তাহলে উপজেলা প্রশাসন জানা মাত্রই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )