বাল্যবিবাহ ও স্বাস্থ্য চিত্র
দেশের অন্যান্য এলাকার মত সীমান্ত এলাকার মেয়েরা বেড়ে ওঠায় সমান সুযোগ পায়না। ২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের এসডিজি প্রতিবেদন বলছে, পাটগ্রামে অতি কম ওজনের শিশুর হার ৮.৬। এ তথ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে পাটগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের দারিদ্র্যের চিত্র। ফলে বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক পরিবর্তনের যে আলাদা গুরুত্ব আছে, এখানকার কিশোরীদের সে বিষয়ে সচেতনতা নেই বললে চলে।
নিরাপত্তার অভাব ও দারিদ্র্যের কারণে এখনো এসব এলাকার পরিবারগুলোতে ছেলেদের কদর বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবে মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার বেশি এই এলাকায়। মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি ছেলেদের তুলনায় বেশি বলে বয়স যা-ই হোক, বিয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করা হয় কৈশোর উত্তরণের আগে।
বুড়িমারী ইউনিয়নের মুগলিবাড়ী সীমান্ত এলাকার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে মোস্তাকিনা আক্তার বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত এলাকার বেশীরভাগ রাস্তা কাঁচা। ইজিবাইক, অটো ভ্যান গাড়িতে যেতে হয়। প্রতিদিন স্কুল কলেজে যাওয়া সম্ভব হয়না। বর্ষাকালে সমস্যা বেশি হয়। আমাদের এলাকা থেকে কলেজ ১৩ কিলোমিটার দূরে। আমাদের মেয়েদের পড়ালেখা করতে যাওয়া-আসাসহ অন্যান্য সমস্যা হয়।’
সীমান্তে সংসার
বুড়িমারী ইউনিয়নের বর্মতল সীমান্ত গ্রামের গৃহবধূ লিপি বেগম। ৪০ বছর বয়সের লিপি বলেন, ‘শরীর অসুস্থ হলেও কোনো উপায় থাকে না, সংসারের কাজ করতেই হয়। অসুস্থ হলে চিকিৎসা মেলে না। অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হলেও কিছু করার থাকে না।’
সীমান্তবর্তী গ্রাম-এলাকার নারীরা নায্য অধিকার থেকে বরাবরই বঞ্চিত। সংসারের সম্পত্তি, জমি-জায়গায় নারীদের অধিকার দেওয়া অনেক কম। স্বামী ও ছেলে সন্তানের নামে যত সম্পত্তির দলিল করা হয়। এতে নারীদের নামে করা হয় যৎসামান্য। সংসারের বিভিন্ন আয়ে নারীদের টাকা বা ভাগ নেওয়ার সুযোগ থাকেনা। স্বামী বা ছেলে সন্তান যা দেয় তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। নিজ ইচ্ছায় কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারে না। পোষাক-পরিচ্ছদও নিজের মনমত কিনতে পারেন না। নারীর পরিশ্রমের বিপরীতে যে তাঁর (নারীর) যে অধিকার তা কখনোই দেওয়া হয়না। এসব এলাকার নারীরা কখনো একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নিজ ইচ্ছেতে কোথাও বেড়াতেও যেতে পারেন না।
কুচলীবাড়ী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকার গৃহিনি লিভা বেগম বলেন, ‘নায্য অধিকার নারীরা কোথায় পায়। সব জায়গায় আমরা অবহেলিত। স্বামী, সন্তানের নামে সম্পত্তি বা জমি বেশি লেখা হয়। আর যা কাগজে পত্রে থাকে সেগুলো তো ভোগ করার ক্ষমতা/সুযোগ থাকেনা। স্বামী, সন্তানই দেখাশোনা বা চাষাবাদ করে।