1. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. [email protected] : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
জামা নিতে পারেনি আইসক্রিম বিক্রেতা মসজিদুল  | দৈনিক সকালের বাণী
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

জামা নিতে পারেনি আইসক্রিম বিক্রেতা মসজিদুল 

অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ি (কুড়িগ্রাম)
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫
  • ৩৯ জন দেখেছেন
আইসক্রীম বিক্রেতা মজিদুল খন্দকার (১৪) নামের এক কিশোর জীবিকার তাগিদে গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে আইসক্রীম বিক্রি করে গরীব দিন মজুর বাবাকে সহযোগিতা করছে।
যেখানে এই বয়সে স্কুল যাওয়াসহ পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকার কথা। সেখানে কিশোর বয়সেই জীবন জীবিকা নির্বাহের লড়াই সংগ্রাম করছে।
আইসক্রীম বিক্রেতা কিশোর মজিদুল খন্দকারের বাড়ি দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা নাওডাঙ্গা গ্রামে। ওই গ্রামের জহুরুল খন্দকারের ছেলে। মজিদুলের বাবা জহুরুল খন্দকার দিন মজুর কাজ করে কোন রকমেই সংসার চলছে।
মজিদুল তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। বড় ভাই মফিজুল খন্দকার ও বড় বোন জেসমিন খন্দকার। অভাবের তাড়নায় বড় ভাই-বোনদেরও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনার ইতি টানেন। বর্তমান তার বড় ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে সামান্য বেতনে কাজ করছে। বোন জেসমিনকে তার বাবা-মা দেড় বছর আগে বিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে মজিদুল ও তার বাবা-মাসহ বাড়িতে কোন রকমেই দিন পাড় করেছে।
দুই বছর আগে কিশোর মজিদুল পড়াশুনার একেবারে ইতি টানেন। এরপর তার বাবা জহুরুল খন্দকার তাকে আইসক্রিম বিক্রির জন্য ধার-দেনা করে গত বছর  ৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের একটি পুরাতন বাইসাইকেল কিনে দেন। সাইকেলের সাথে একজনের পড়ে থাকা আইসক্রিম রাখার একটি বাক্সও জোগাড় করে বাইসাইকেল তার হাতে তুলে দেন। বাবার দেয়া সাইকেল চালিয়ে মজিদুল এখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করা শুরু করেন।
এ বছর আইসক্রিম বিক্রি শুরু করেন গত ১৫ থেকে ২০ দিন আগে থেকেই।
২৮ মার্চ শুক্রবার দুপুরে মজিদুলকে কুরুষাফেরুষা গ্রামে বাইসাইকেলের পিছনে আইসক্রিম রাখার বাক্স ও সাইকেলের পিছনে হ্যান্ড মাইকে ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া গান ও এই স্পেশাল,স্পেশাল, স্পেশাল সুপার স্পেশাল, দুই টাকা, পাঁচ টাকার বিনিময় গরম লাগলে ঠান্ডা হয়, খাইলে পরাণ জুড়ায়, কি খাইলে পুরাণ জুড়ায়, হ্যা হ্যা, স্পেশাল স্পেশাল স্পেশাল সুপার স্পেশাল। খাইতে লাগে ভাল, ভালো করে শুনি নেও একটা করে নিয়া খাও, দেও দেও আরে ও আইসক্রিম ওয়ালা গাঁন বাজিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করতে দেখা গেছে মজিদুলকে। এ সময় তার মাইকের গান শুনে বাড়ির ভিরতে থাকা শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ ছুটে আসে আইসক্রিম কিনতে। সে সময় আইসক্রিম বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ব্যস্ততা শেষে আইসক্রিম বিক্রেতা কিশোর মজিদুল খন্দকারের সাথে কথা হলে প্রথমে অনেকটা হাসি-খুশীতে কথা বলে এবং সে বলে রমজান মাসে বিক্রি কম হওয়ায় অল্প পরিমান আইসক্রিম বিক্রি করছেন সে। রমজান মাসে সব আইসক্রিম বিক্রি হলে তার ২০০ টাকা আয় হবে। রমজান মাস শেষ হলে বিক্রি বেশি হলে তার ৪০০ টাকা আয় আসবে।
পড়াশুনা ছেড়ে এই বয়সে আইসক্রিম বিক্রি বিষয়ে জানতে চাইলে মজিদুল জানান, আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। আমার বাবা গরীব দিন মজুর। তাই অভাবের তাড়নায় গত দুই বছর আগে আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য কাজ-কর্মের পাশাপাশি আইসক্রিম বিক্রি করে দিন মজুর বাবার সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করছি।
মজিদুল আরও জানান আমার বড়ভাইও সামান্য বেতনে গার্মেন্টসে কাজ করে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা দেন। বাবা দিন মজুরী করে আমি আইসক্রিম বিক্রি করি কোন রকমেই সংসার চলছে আমাদের।
দুইদিন পরেই ঈদ, ঈদে কি নতুন জামা নেয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্ন করলে মজিদুল কিছুক্ষণ স্থির থেকে জানালেন না, এখন নেয়া হয়নি। তবে বাবা বলেছে তোর আয়ের টাকা দিয়ে শার্ট-প্যান্ট নিতে পারলে নিও। তাই চেষ্টা করছি আইসক্রিম বিক্রির টাকা দিয়েই নতুন জামা-কাপড় নেওয়ার জন্য সকাল সকাল গ্রামে গ্রামে ছুঁটছে আইসক্রিম বিক্রেতা কিশোর মজিদুল।
পরে মজিদুলের কাছ থেকে তার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে শুক্রবার বিকালে মজিদুল বাড়িতে গেলে তার বাবা জহুরুল খন্দকার (৪৫) রোজা থেকেও চৈত্রের রোদে মানুষের জমিতে দিন মজুরীর কাজ শেষে বাড়িতে ফিরছেন। মজিদুলের বাবার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বাহে কি করবো গরীব মানুষ পেটে খাই, কাজতো করতেই হবে। কেমন দিন যাচ্ছে দিন মজুরে করে। বাহে দিনতো সবার যায়। তবে রমজান মাসে ধনী ও বড়লোকরা ভালো ভালো খারার খাই, আমাদের ভালো খাবার খাওয়া কপাল নেই। রমজান মাসেই শেষে হয়ে গেল এক পোয়া গরু মাংসও কিনতে পারিনি। অনেক কষ্টে দুই দিন ছোট পোলাটা বয়লারের গোস্ত নিয়ে এসেছে। তাকে দুই দিন খেয়েছি বাহে মিছা কথা বলবো না। মাঝে মধ্যে মাছ ও ডিম খাই বাহে ! যে কোণে আলুর দাম কম হওয়ায় খাইতে পারছি। সত্যি কথা বলতে কি, কবে গরুর মাংস খেয়েছি মনে করতে পারছি। তবে কমপক্ষে আড়াই-তিন মাসতো হবেই।
আপনার ছোট ছেলে আইসক্রিম বিক্রি করে ২০০ টাকা আয় করে। আপনি দিন মজুরি কনে পান ৪০০ টাকা। আবার আপনার বড় ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে তাহলে আপনি কেন গরুর মাংস খেতে পারবেন না, এমন প্রশ্ন করলে জহুরুল খন্দকার বলেন, মেয়ে বিয়ে ও বাড়ি ঘর তোলার সময় অনেক ঋন করতে হয়েছে। এখনও ঋনের বোঝা মাথায়। প্রতি সপ্তাহে ১৬০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। বড় ছেলে সামান্য বেতনে গার্মেন্টসে কাজ করে। তার খাওয়া দাওয়া বাসা ভাড়াতে যায়। ঈদে বাড়ীতে আসলে হয়তো আমার জন্য একটা লুঙ্গি, তার মায়ের একটা শাড়ি ও তার ছোট ভাইটার একটা জামা নিয়ে আসলেও আসতে পারে। না নিয়ে
আসলে নাই। এখানে ছেলের প্রতি কোন অভিমান নেই। আমার দুঃখ শুধু একটাই, ঘরে টাকা নেই। ঈদের মাত্র দুইটা দিন বাকি। একজন অভিভাবক হিসাবে এখনো স্ত্রী-সন্তানের জন্য কিছুই কিনতে পারিনি, আজ কালের মধ্যে কিনতে পারবো কি সেটাও অনিশ্চিত।
প্রতিবেশি একজন সহকারী শিক্ষক রতন চন্দ্র রায় জানান, আমার চোখের দেখা। জহুরুল ভাই দিন মজুরী করেই কোন রকমেই সংসার চালাছেন। অভাবের কারণে দুই ছেলের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। বড় ছেলে ঢাকায় সামান্য বেতনে গার্মেন্টসে চাকরি করলেও সংসারে টাকা পয়সা দেন না। শুনেছি তার নিজে খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। আর ছোট ছেলেটা কোন কাজ কর্ম করে না। শুধু গরম আসলেই আইসক্রিম বিক্রি করতে দেখা যায়। বলতে গেলে কোন রকম ভাবে চলছে। দেড় বছর আগে আবার ঋন করে মেয়েকে বিয়ে দেন। কামাই করে ঠিকেই। কিন্তু ঋন থাকার কারণে ভালো মন্দ খেতেও পারে না। রমজান মাসে মানুষ ভালো ভালো খাবার খাইলেও জহুরুলের ভাগ্যে ভালো খাবারও জোটে না। তবে সে কর্মঠ৷ আমি বিশ্বাস করে কর্মঠ মানুষগুলো এক দিন সুখ আসবেই।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )