কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ যেন এক সবুজ-সোনালী রঙে ভরিয়ে গেছে। মাত্র দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে কৃষকরা হাঁড় ভাঙা পরিশ্রম করা প্রধান ফসল বোরো ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। ঠিক এরই মধ্যে কৃষকের স্বপ্নের ফসলে হানা দিয়েছে মাজরা পোঁকা। মাজরা পোঁকার আক্রমণে কৃষকের শতশত ধান ক্ষেতে সাদা মরা শীষ ব্যাপক পরিমাণে দেখা দিয়েছে। ক্ষেতেই ধানের সাদা মরা শীষ বের হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ধানের একটি গাছে কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি চিটাযুক্ত মরা শীষ বের হওয়ায় চরম আশঙ্কায় দিন পাড় করেছেন কৃষক। কৃষি অফিসের পরামর্শে মাজরা পোঁকা দমন করতে একেক জমিতে কমপক্ষে তিন-চার বার করে
কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করলেও ধান ক্ষেতের মাজরা পোঁকা দমন করতে পারছে না কৃষকরা। ফলে বিঘা প্রতি দুই থেকে তিন মন ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। উপজেলার নাওডাঙ্গা ও বড়ভিটা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে কৃষকের জমিতে মরা ধানের শীষ বের হয়েছে। যেন বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে মরা শীষের ছড়াছড়ি।
দক্ষিন বড়ভিটা গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব জানান, ১ বিঘা জমিতে হীরা ১৯ হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ করেছি । জমিতে সঠিকভাবে পরিচর্যাও করা হয়েছে। সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শে কীটনাশক ও দানাদার বিষ ছিটিয়ে মাজরার জন্য দুই স্প্রে করার পরও এখনো মরা শীষ বের হচ্ছে। ফলে তিনি তার জমিতে ধানের উৎপাদন আশঙ্কায় ভুকছেন। একই কথা জানান ওই ইউনিয়নের ঘোগারকুঠি গ্রামের কৃষক ছকিয়ত আলী।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরগোরকমন্ডল এলাকার কৃষক ফজর আলী (৭৮) জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে রোবোর চাষাবাদ করেছে। চার বিঘা জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণ করেছে। তিনি আরও জানান মাজরা না হলে বিঘা ২৭ থেকে ২৮ মন ধান ঘরে তুলতে পারতাম। বিঘা প্রতি দুই/তিন মন কম আসবে। একই কথা জানান পশ্চিম ফুলমতি গ্রামের কৃষক মুসলিম উদ্দিন ও আজিবর বড়। তারা প্রত্যেকে দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করেছেন এবং দুই জমিতেই মাজরা দেখা দিয়েছে।
বড়ভিটা বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী জায়দুল হক বলেন, প্রতি বছরের মত এবারোও সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন কোম্পানি থেকে নেয়া কীটনাশক ঔষধ সরবরাহ করা হয়। যেমন হটসট, হাইপার, মেট্রো, লিট থ্রী, টুপার স্প্রে করার জন্য পরামর্শ ও বিক্রি করছেন। প্রতিবছর তাই করেছেন। তবে এবছর কি কারণে মারজা পোঁকা দমন হচ্ছে না বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: নিলুফা ইয়াছমিন জানান, এ বছর চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলা জুড়ে ১০ হাজার ২০৫ জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪১০ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। আগামী দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি ভাবে বোরো ধান মাড়াই শুরু হবে। তিনি জানান, কিছু কিছু ক্ষেতে মাজরা দেখা দিয়েছে। তবে যে সকল কৃষক সরাসরি মারজা পোঁকা নিমূলের জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়েছেন। তাদের অধিকাংশ ক্ষেতে মারজা পোঁকা নিমূল হয়েছে। আবার প্রান্তিক পর্যায়ের কিছু কিছু কৃষক বিভিন্ন হাট-বাজার কীটনাশক বিক্রেতার কাছে পরামর্শ নেন ও ঔষধ ক্রয় করেছেন। সেই সকল কৃষকদের ধান ক্ষেতে মারজা তেমন ভাবে নিমূল না হলেও মাজরা পোঁকার আক্রমণে কৃষকদের তেমন কোন ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।