1. onlinesokalerbani@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. iqbalbarabil80@gmail.com : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. sharifuzzamanmdiqbal@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
বিয়েকে “না” বলা দুই কিশোরী মীম ও মৌসুমীর সফলতার সাতকাহন  | দৈনিক সকালের বাণী
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন

বিয়েকে “না” বলা দুই কিশোরী মীম ও মৌসুমীর সফলতার সাতকাহন 

ভূরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২২৮ জন দেখেছেন
বাল‍্য বিয়েকে “না” বলে পড়া লেখার পাশাপাশি  কাপড়ের ব‍্যাবসা ও ছাগল পালন করে সফল হয়েছেন দুই কিশোরী মীম জান্নাতুল ও মৌসুমী । অসহায় ও হতদরিদ্র ঘরের সন্তান তারা।

দশম শ্রেনীতে পড়ার সময়েই তাদের বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে। কিন্তুু তারা তাদের বাবা মাকে বুঝিয়ে বিয়ের বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে স্বপ্ন জয়ের পথে এগুতে থাকেন। মীম ও মৌসুমী মহিদেব যুব সমাজ কল‍্যান সমিতি (এমজেএসকেএস) নামের একটি এনজিও থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেখান থেকে তারা কিছু টাকা পায়।

সেই টাকা দিয়ে মীম শুরু করেন কাপড়ের ব‍্যাবসা আর মৌসুমী শুরু করেন ছাগল পালন। তারা নিজ নিজ কর্মে সফলতা পেয়ে নিজ পরিবার ও সমাজে মাথা উচু করে স্বাবলম্বী হয়ে দাড়িয়েছেন। নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেরাই এখন বহন করে তাদের পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে  পারছেন।

মীম ২০২৫ সালে উপজেলার সোনাহাট ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং মৌসুমী ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ভূরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রী কলেজ থেকে উর্ত্তীর্ণ হয়েছেন। মৌসুমী জজ আর মীম আইনজীবী  হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এখন।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী  উপজেলার চরভূরুঙ্গামারী  ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে তাদের বসবাস। ওই গ্রামে অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারে দিনাতিপাত করেন তারা। বাল‍্য  বিবাহের বিরুদ্ধে নিজের পরিবার ও সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদেরকে এখন সফল ও স্বাবলম্বী করে তুলেছেন।

মীম জান্নাতুল : জীবনে বড় হতে গেলে মনে সাহস আর চোখে স্বপ্ন থাকতে হয়। আত্মবিশ্বাস আর মনে সাহস থাকলে সাধারণ মানুষও হয়ে উঠতে পারেন অসাধারণ। সফলতার মুখ দেখতে চাইলে পরিশ্রম ও ধৈর্য ধারণের মানসিকতা থাকাও খুব জরুরি। তেমনি একজন কিশোরী মীম জান্নাতুল মীম। দারিদ্রতার শত বাধা উপেক্ষা করে সফল হওয়া একজন কিশোরী মীম। নিভৃত পল্লীতে দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। তার বাবার নাম মিজানুর রহমান রিন্টু মায়ের নাম মনোয়ারা খাতুন। দুই ভাই বোনের মধ‍্যে মীম বড়।

এই কিশোরীর স্বপ্ন পড়ালেখা করে আইনজীবী  হওয়ার। মীম ২০২৫ সালের এইচএসসি পরিক্ষার্থী। তার বাবা পাশের নতুন হাট বাজারে চায়ের দোকান করেন। সেখান থেকে যে আয় হয় সেটা দিয়ে কোনরকমে সংসার চলে তাদের।

পরিবারের অভাব অনটনের কারনে পড়ালেখার খরচ চালাতে না পেরে মীমের বিয়ের চাপ বাড়তে থাকে। মীম তার বাবাকে সরাসরি তার বাবাকে বলে দেয় সে এখন বিয়ে করবেনা। বিয়ের জন‍্য চাপ দিলে মীম প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়ার হুমকি দেন তার বাবাকে।

পরে ইসলামপুর যুব কল‍্যান সংস্হার সভাপতি মোসুমীর পরামর্শে মহিদেব যুব সমাজ কল‍্যান সমিতির সিএনবি প্রকল্পের কাপড় সেলাইয়ের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করেন।সেখান থেকে তিনি ১৭ হাজার টাকা পান।

সেই টাকা দিয়ে শুরু করেন নিজ বাড়িতে কাপড়ের ব‍্যাবসা। পাড়া প্রতিবেশীর জামা কাপড় সেলাই এবং নিজের তৈরী বিভিন্ন ডিজাইনের কাপড়ও বিক্রি করছেন। পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছেন।এই আয় দিয়ে তার পড়ালেখার খরচ ও তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেও অনেক টাকা জমিয়েছেন।

মীম বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। যেকোনো কাজ করে নিজেকে স্বাবলম্বী এবং সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাওয়া যায়।তাই ঘরে বসে না থেকে যে যা পারে, সেই কাজ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

মৌসুমী : মৌসুমীর বাবার নাম আব্দুস সামাদ মায়ের নাম ফজিলা খাতুন। মৌসুমীর চার বোন দুই ভাই। হতদরিদ্র পরিবারে ৬ সন্তানের লেখা পড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেত তার বাবা।

সেসময় একমাত্র উপাজনক্ষম ব‍্যাক্তি ছিল মৌসুমীর বাবা। কৃষি ছিল তার বাবার একমাত্র পেশা। বসতভিটা আর সামান‍্য কৃষি জমি তাদের। সেগুলো দিয়েই কোন রকমে জীবন চলত।হঠাৎ তার বাবা অসূস্হ‍্য হয়ে পড়লে তাদের ওই আবাদী জমিটুকু বন্ধক রেখে তার বাবার চিকিৎসা করান। আল্লাহ রহমতে সূস্হ‍্য হয়ে উঠেন তার বাবা।কিন্তুু দারিদ্রতা পিছু ছাড়েনা তাদের। ইতোমধ্যে তার তিন বোন বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যায়।

অনেক কষ্টে ধার দেনা করে তিন বোনের বিয়ে দেন। এরপর পর মৌসুমীর পালা। বিভিন্ন জায়গা থেকে মৌসুমীর বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। তার বাবা বিয়ের জন‍্য পাগল হয়ে যায়। অভাবের সংসারে মেয়েকে পড়া লেখা করিয়ে কি লাভ হবে?মৌসুমীও বিয়েকে না বলে দেয়। এখন বিয়ে করবেনা বলে তার পরিবারকে বুঝায়। সমাজ ও পরিবারের নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও পড়ালেখা করে মানুষের মত মানুষ হতে চায় মৌসুমী।

এমন সময় মহিদেব যুব সমাজ কল‍্যান সমিতি (এমজেএসকেএস) নামে একটি এনজিও মৌসুমীর মত বিয়ের ঝুকিতে থাকা মেয়েদের পাশে এসে দাড়ায়। ওই এনজিওটির বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহন করতে থাকে মৌসুমী। পরে ওই এনজিওটিকে সহযোগিতাকারী প্রতিষ্ঠান প্লান ইন্টারন‍্যাশনাল মহিদেব যুব সমাজ কল‍্যান সমিতির সিএনবি প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন মৌসুমী।

ছাগল পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। তার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে আয়বর্ধনমূলক কাজ হিসাবে ছাগল পালন করার সিদ্ধান্ত নেন।পরে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে মহিদেব যুব সমাজ কল‍্যান সমিতি তাকে ১৭ হাজার টাকায় দুটি ছাগল কিনে দেয়। বিয়ের পিঁড়ি ভেঙ্গে পড়া লেখার খরচ যোগাতে শুরু করে ছাগল পালন। বর্তমানে সঠিক পরিচর্যার ফলে তার ৪টি ছাগল থেকে মোট ছাগলের সংখ্যা হয়েছিল ১৮টি। তার মধ‍্যে ৪ টি ছাগল বিক্রি করেছেন।এখন আরো ১৪ টি ছাগল আছে।

মোসুমী বলেন, তিনি এখন নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন। পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরি করে সংসারের অভাব অনটন দূর করে মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। তারপর বিয়ে নিয়ে ভাবব।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )