বাংলাদেশ

নদীর ঘাটে অসুস্থ স্কুল ছাত্রীকে স্পিড বোর্ডে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলো ডিসি

নাজমুল হোসেন   কুড়িগ্রাম

০২ মে ২০২৪


| ছবি: 

কুড়িগ্রামের বৃহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন রৌমারী উপজেলার  সময় মতো সিরিয়ালের নৌকা না পাওয়া এবং রিজার্ভ নৌকা নেবার স্বামর্থ্য না থাকায় অসহায় অবস্থায় ঘাটে বসে ছিল। সিরিয়ালের নৌকার জন্য ঘাটে তীব্র পেটের ব্যথা নিয়ে কাতরাচ্ছিল স্কুল ছাত্রী কবিতা। তার এমন অসহায়ত্ব দেখে স্পিড বোর্ডে চিলমারী ঘাট ও পরে সরকারি গাড়িতে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সাঈদুল আরীফ। পরে হাসপাতালে চারদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে আজ বৃহষ্পতিবার ২ মে দুপুরে বাড়িতে ফিরে যায় কবিতা। কবিতার বাবা-মাসহ পুরো গ্রামবাসী জেলা প্রশাসকের এমন মানবিকতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কবিতা জেলার রৌমারীর বকবান্দা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী এবং ওই এলাকার দিনমজুর আইয়ুব আলীর মেয়ে। কবিতা চার বোনের মধ্যে সবার ছোট। প্রায় ১৫ দিন থেকে পেটের তীব্র ব্যথায় ভুগছিল সে। কবিতার পরিবার জানায়, পল্লী চিকিৎসক এবং রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিলেও কোন উন্নতি হয়নি। তাই গত শনিবার সকাল থেকে তীব্র পেট ব্যথার মধ্যেই তার বাবা আইয়ুব আলী মেয়েকে নিয়ে কুড়িগ্রামের উদ্দ্যেশে রওনা দেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। প্রতিবেশি তার এক চাচাত ভাই মটর সাইকেলে করে রৌমারী ঘাটে পৌঁছে দেয় তাদের। সেখানে তার বাবা কুড়িগ্রামগামী নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ঘাটের লোকজন কবিতার শারীরীক অবস্থা দেখে আতংকিত হয়ে পড়ে। তীব্র পেট ব্যথায় কাতরাছিল।এমন সময় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সাইদুর আরিফ ও পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম রৌমারী উপজেলায় তাদের দাপ্তরিক কাজ শেষে কুড়িগ্রাম ফিরছিলেন।তিনি রৌমারি ঘাটে এসে কবিতার সংকাটাপন্ন অবস্থা দেখতে পান। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাৎক্ষনিক ভাবে তার স্পিট বোর্ডে কবিতা ও তার বাবাকে উঠিয়ে নিয়ে কুড়িগ্রাম এর উদ্দ্যেশে রওনা দেন। মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যে চিলমারী ঘাটে পৌঁছে তার গাড়ীতে উঠিয়ে নিয়ে আধা ঘন্টার মধ্যে কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল  হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরে কুড়িগ্রাম সমাজ সেবা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নেয়। শুরু হয় কবিতার চিকিৎসা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টানা তিন দিন নিবীর পর্যক্ষণ ও চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে কবিতা সুস্থ্য হয়ে উঠে।

কবিতা জানায়, আমি গ্রামের ডাক্তার ও রৌমারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও কোন লাভ হয়নি। আমরা গরীব বলে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে দ্রুত আসতে পারিনি। তবে জেলা প্রশাসক স্যারের মানবিকতার কারণে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি আমি। কবিতার বাবা আইয়ুব আলী বলেন,  আমি দিনমজুরী করে সংসার চালাই। কবিতা কয়েক দিন থেকে পেটের ব্যথায় অসুস্থ হলেও টাকার অভাবে ঠিকমত চিকিৎসা করতে পারিনি। সেদিন যদি জেলা প্রশাসক স্যার আমার মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিতেন তাহলে পথেই হয়তো আমার মেয়ে মারা যেতো। টানা দুই সপ্তাহ থেকে সে খুব অসুস্থ ছিল। পৌর সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জানান, আমরা যখন অসহায় গরীব কবিতার অসুস্থতার কথা শুনেছি। তখনি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ঔষধসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করেছি। এ ধরনের অসহায় রোগী পেলে আমরা তাদের সহায়তা করবো।কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিনুর রহমান সর্রদার জানান, গত চারদিন থেকে কবিতার বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছিল। তার শরীরে বড় কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। ও কয়েক দিনের চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে উঠেছে। 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সাইদুর আরীফ জানান, আমি এবং পুলিশ সুপার মহোদয় রৌমারী থেকে কুড়িগ্রাম আসার পথে রৌমারী ঘাটে দেখতে পাই কবিতা খুবই পেট ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল।  এই অবস্থা দেখে তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য আমার সাথে কুড়িগ্রাম নিয়ে আসি। এবং তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার গ্রহন করা হয়। কবিতা সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছে।

17