বাংলাদেশ

পথচলা কঠিন হলেও বেঁচে থাকার লড়াই খাইরুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক   গাইবান্ধা

৩১ জানুয়ারী ২০২৪


| ছবি: 

বৃদ্ধ খাইরুল ইসলাম (৬৫)। একসময় দিনমজুরের কাজ করতেন। বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই কাজে অক্ষম। তাই জীবিকার তাগিদে বেঁছে নিয়েছেন ফেরি করে পানের খিলি বিক্রি পেশা। সারাদিন গলায় বাক্স ঝুলিয়ে হেঁটেই ছুটেন জনবহুল স্থানে। বার্ধক্য বয়সে পথচলা কঠিন হলেও বেঁচে থাকার লড়াইয়ে থেমে নেই এই বৃদ্ধ। সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে ছুটতে দেখা গেছে, বৃদ্ধ খাইরুল ইসলামকে। সেখানে শীতে যবুথবুভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছিলেন পানের খিলি। এসময় তার চোখে-মুখে লক্ষ্যণীয় হতাশার ছাপ। তার বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নে। তিনি ওই ইউনিয়নের ভাতগ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে।  
জানা যায়, ছিন্নমূল পরিবারের খাইরুল ইসলাম যখন টগবগে যুবক, তখন তারা বাবা মফিজ উদ্দিন চলে যান না ফেরা দেশে। বাধ্য হয়ে অভাবের সংসারে হাল ধরেন তিনি। এরপর জীবিকার তাগিদে শুরু করেন দিনমজুরের কাজ। সারাদিন অন্যের জমিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কোনমতে চলছিল তার সংসার। এরই ধারাবাহীকতায় বার্ধক্য বয়সে পৌঁছিলে দিনমজুর কাজের কদর কমে যায় তার। বয়স বুড়ো হওয়ায় আগের মতো কেউ আর তাকে কাজে লাগাতে চান না। ফলে থমকে যায় জীবনযাপন।
এ অবস্থায় স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হয় তাকে। বাধ্য হয়ে ৩ বছরে আগে বেঁছে নেয় ফেরি করে পানের খিলি বিক্রির ব্যবসা। এসময় গৃহপালিত দুটি মোরগ ও একটি হাঁস বিক্রি করে এই ক্ষুদ্র ব্যবসাটি শুরু করেন তিনি। এরপর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দৈনন্দিন পান-সিগারেট বিক্রিতে লাভ থাকে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর এই আয়ের টাকা দিয়ে চলছে বৃদ্ধ খাইরুলের সংসার। জীবযুদ্ধে শেষ বয়সেও তপ্ত রোদ আর শীত-বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রোজগারের লক্ষে ছুটে চলা তার।
সাদা মিয়া নামের এক গ্রাহক বলেন, যেখানেই দেখা হোক, খাইরুল চাচার ভ্রাম্যমান দোকানে পানের খিলি কিনে থাকি। বিন্তু তার দোকানে দামি ব্রান্ডের কোন সিগারেট পাওয়া যায় না। এজন্য গ্রাহক কম। তাকে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোহিতা করা দরকার। প্রতিবেশী জিল্লুর রহমান নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, যে বয়সে খাইরুল চাচার বিশ্রামে থাকার কথা কিন্তু সেই বয়সে হেঁটেই ছুটেন বিভিন্ন হাট-বাজারে। সারক্ষণ গলায় বাক্স ঝুলিয়ে পৌঁছে যান জনবহুল স্থানে। সেখানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন পানের খিলিসহ বিড়ি-সিগারেট। এ থেকে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়ে চলে তার সংসার। 
বৃদ্ধ খাইরুল ইসলাম জানান, তার দুই ছেলের মধ্যে একজন বিয়ে করে আলাদা খায়। ছোট ছেলে নানার বাড়িতে বড় হচ্ছে। বাঁচার তাগিদে অন্যের কাছে হাত না পেতে ফেরি করে পানের খিলি বেচে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, আমার তেমন কোন পুঁজি নেই। তাই দিনে একাধিকার ২০০ টাকার পান-সুপারি ও চুন-জর্দ্দা কিনে খিলি বিক্রি করি। এ থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা লাভ হয়। তবে পূঁজির অভাবে দামি সিগারেট ব্যবসা করতে পারছি না। পানের সঙ্গে এই সিগারেট বিক্রি করতে পারলে আরও লাভবান হওয়া সম্ভব। ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান বলেন, খাইরুল চাচা অত্যান্ত ভালো মানুষ। তাকে পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।

24