বাংলাদেশ

বৃদ্ধার মোনাজাতে হাত তুললেন প্রধানমন্ত্রী

মাহফুজ ইসলাম বকুল   লালমনিরহাট

১১ জুন ২০২৪


| ছবি: প্রতিনিধিঃ

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীনে পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে লালমনিরহাটে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলায় ধাপে ধাপে ৫ হাজার ৮৫৭ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে গণভবন থেকে ভার্সুয়ালী যুক্ত হয়ে জেলার ভূমিহীন মানুষদের সুখ দুখের গল্প শুনেন। এসময় সাহেরন বেওয়া নামে একজন গৃহকর্মীর সাথে কুশল বিনিময়কালে তার মাউথপিস হুট করেই কেড়ে নেওয়ায় ক্ষেপে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই দ্রুত আবার তাকে মাইক দিতে নির্দেশ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে হাত তুলে মুনাজাত করায় প্রধানমন্ত্রী হাত তুলে দোয়া শুরু করেন। 
ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলে ওঠেন, এই এই, কেড়ে নাও কেন, পড়তেছে। একি! এটা কেমন কথা হলো?

এরপর ওই বৃদ্ধার কাছে মাইক্রোফোনটি আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করতে থাকেন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেকে অসহায় দাবী করে ঘর পাওয়ায় কেদে কেদে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।


তার বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী তাকে আরও ভাল থাকার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। শেষে প্রধানমন্ত্রী আবারও উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, "মোনাজাত করতেছে, মাইকটা টেনে নিয়ে গেলো, হোয়াট ইজ দিস?"
এসময় উপস্থিত অন্য কেউ হাত না তুললেও প্রধানমন্ত্রী ওই বৃদ্ধার সাথে হাত তুলে দোয়া করেন। কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে বৃদ্ধার কান্না দেখে প্রধানমন্ত্রীও কেদে ফেলেন।

শাহেরন বেওয়া তার বক্তব্যে বলেন, আগে মানুষের জমিতে অস্থায়ী ঘরে থাকতাম, এখন স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। নিজেদের বাড়িতে বসবাস করছি। আমার একটা ছেলে পাগল, সন্তানদের নিয়ে ঘরে থাকতে পারি, নিজের একটু জায়গা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। আগে অন্যের জমিতে থাকতে হতো ছনের ঘরে, দুর্বিষহ কেটেছে ৪০ বছর। জীবনের ক্লান্তি লগ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি । তিনি জানান, স্বপ্নেও ভাবি নাই, নিজের পাকা বাড়ি হইব। সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগতেছে। 

এর আগে বেলা ১২ টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঈদের উপহার হিসেবে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মুইষামুড়ি এলাকায় সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে দরিদ্র এসব মানুষ বেশ খুশি হয়েছেন। অনেকে এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে মা হিসাবে সম্বোধন করে জানিয়েছেন ধন্যবাদ, মঙ্গল কামনায় করেছেন প্রাণভরে দোয়া । 

মহিষামুড়ি আশ্রয়নে ঘরের পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নোয়নে অনেককে সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ, গরু মোটাতাজাকরণ ও মৎস্য চাষেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কৃষিবিভাগ থেকে কোনো কোনো পরিবারের জন্য করা হয়েছে পুষ্টিবাগান। বিদ্যুৎ বিভাগ পরিবারগুলোর মাঝে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর থেকে প্রতি ১০ পরিবারের জন্য একটি করে নলকুপ স্থাপন করেছেন। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন,লালমনিরহাট স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ ও মতিয়ার রহমান এমপি, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডি আই জি আব্দুল বাতেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল,সাবেক সংসদ সদস্য সফুরা বেগম রুমি, লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার, সাইফুল ইসলাম, লালমনিরহাট পৌরসভার পৌর মেয়র, রেজাউল করিম স্বপন, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, রাকিবুবুজ্জামান আহমেদের, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা,জহির ইমাম প্রমুখ।

43