বাংলাদেশ

পঞ্চগড়ে পরকিয়া  ও ছিনতাইয়ে দুটি হত্যা পুলিশ সুপার

আবু সালেহ মোঃ রায়হান   পঞ্চগড়

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪


| ছবি: 

মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে খুনী ভাড়া করে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার কৃষক টাবুল বর্মনকে কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন পরকীয়া প্রেমিকা ললিতা রানী। অপরদিকে জেলার বোদা উপজেলায় ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য ভায়রা ইজিবাইক চালক নুরুল ইসলামকে সহযোগীদের নিয়ে হাতপা বেধেঁ শ্বাসরোধে হত্যা করেন তারই ভায়রা জালাল উদ্দীন। শুক্রবার সন্ধ্যায় পঞ্চগড়ে উদ্ধার হওয়া দুইটি মরদেহের হত্যাকান্ড নিয়ে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এসএম শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস্) কনক কুমার দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিরুল্লাহ, ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  প্রদীপ কুমার রায়, বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক সহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের ডেলোপাড়া এলাকায় একটি আম বাগানের ড্রেন থেকে উপজেলার কৃষক টাবুল বর্মনের (৪৮) মরদেহ ও বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর সাওতালপাড়া ঘাট এলাকা থেকে হাতপা বাধাঁ অবস্থায় ইজিবাইক চালক নুরুল ইসলামের (৪৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য শনিবার সকালে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত টাবুল বর্মনের বাড়ি পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত ভগিরাম বর্মনের ছেলে এবং নিহত নুরুল ইসলামের বাড়ি বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের কাউয়া খাল মাঝিয়ালী এলাকায়। তিনি ওই এলাকার ইয়াসিন আলীর ছেলে।

পুলিশ সুপার জানান, সদর উপজেলার কৃষক টাবুল বর্মনের সাথে একই এলাকার গৃহবধূ ললিতা রাণীর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। তবে সে সর্ম্পকটি আর রাখতে চাচ্ছিলেন না ললিতা। এনিয়ে তাদের মাঝে সর্ম্পকের অবনতি হয়। একপর্যায়ে টাবুলকে শাস্তি দেয়ার জন্য ললিতা রানী নামে ওই নারী চাকলাহাট ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম ও মনতাজ আলী নামে দুই ব্যাক্তির সাথে পরার্মশ করেন। পরে তারা ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে টাবুলকে শাস্তি দেয়ার জন্য চুক্তি হয়। পরে তিনদফায় তাদের ১৮ হাজার টাকাও দেয়া হয়। পরে ৩১ জানুয়ারী (বুধবার) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের জয়গুন মার্কেটে টাবুলকে ডেকে নেন ললিতা। পরে ললিতার জামাই প্রভাতের মোটরসাইকেলে করে পাওনা টাকা আদায়ের নাম করে উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের ডেলোপাড়া এলাকার আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তির ৭০ বিঘার এক আম বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ধারালো কুড়াল দিয়ে টাবুলের মাথা, ঘাড়, পিঠ, ডান পা ও কোমরে সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। পরে ওই আমবাগানের ভেতরের একটি বাশঁঝাড়ের পাশের ড্রেনে টাবুলকে মাটিচাপা দিয়ে রাখেন হত্যাকারীরা।

এর আগে, গত ৩১ জানুয়ারী (বুধবার) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় আলসিয়া খানা বাজারে আসেন টাবুল। পরে আর তিনি বাসায় না ফেরায় পরদিন ১ ফেব্রুয়ারী পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন তার ভাই গোবিন্দ বর্মন। পরে টাবুলের মুঠোফোনের কললিষ্টের সূত্র ধরে অভিযানে নামে পুলিশ। পরে এঘটনায় জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ললিতাকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এদিকে ললিতার মেয়ে মনিকা রানী (২৩) ও জামাতা প্রভাত চন্দ্র রায়কে (২৮) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। পরে মনিকাকে ছেড়ে দেয়া হলেও প্রভাতকে আটক করে রাখা হয়। হত্যাকান্ডের ঘটনায় টাবুলের ভাই গোবিন্দের সাধারণ ডায়েরীটি মামলা হিসেবে নেয়া হয়। পরে ললিতা রানী ও তার জামাই প্রভাত চন্দ্রকে ওই মামলায় প্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হয়েছে। মামলার অপর আসামী রফিকুল ও মোনতাজকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

অন্যদিকে, বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের কাউয়াখাল মাঝিয়ালী এলাকার ইজিবাইক চালক নুরুল ইসলামকে গত ২৭ জানুয়ারী বিকেলে মাড়েয়া এলাকায় ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইকে ওঠেন তার গাইবান্ধা জেলার বাসিন্দা ভায়রা জালাল উদ্দীন, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলম সহ কয়েকজন। পরে তারা বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর সাওঁতালপাড়া ঘাট এলাকায় নুরুলকে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে তার দুইহাত পিঠের দিকে নিয়ে ও মুখ, নাক গামছা দিয়ে এবং দুই পা রশি দিয়ে বেধেঁ শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

15