বাংলাদেশ

কারাগারে বসে পরিকল্পনা, জামিনে বেড়িয়ে অভিনব কায়দায় চুরি, আটক ৪

জসিম উদ্দিন, খানসামা   দিনাজপুর

০৯ জুন ২০২৪


| ছবি: প্রতিনিধিঃ

স্ত্রী হত্যা মামলায় কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় ওয়াশিম হকের সাথে পরিচয় হয় একটি চোর চক্রের। সেখানেই পরিকল্পনার ছক আঁকা হয় চেতনানাশক ঔষধ দিয়ে কোন বাড়ির সদস্যদের অজ্ঞান করে চুরি করার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী জামিনে বেড়িয়ে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার এক পরিবারের সকল সদস্যদের অজ্ঞান করে নগদ ৪০ লক্ষ টাকা, মূল্যবান জিনিসপত্র এবং মোবাইল ফোন চুরি করে। এ ঘটনায় ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও টাকা সংরক্ষণে জড়িত ৪ জনকে আটক করেছে খানসামা থানা পুলিশের সদস্যরা। চুরি হয়ে যাওয়া ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা এবং বাকি টাকা উদ্ধার ও জড়িত সকলকে গ্রেফতার করতে থানা পুলিশ কাজ করছে বলে জানা যায়। 

থানা পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তিরা হলেন, চুরির পরিকল্পনাকারী উপজেলার খামারাপাড়া ইউনিয়নের ডাঙাপাড়া চৌধুরী পাড়ার মৃত ইছাহাক আলীর ছেলে ওয়াশিম হক (৩৮), তার শ্যালক গোবিন্দপুর গ্রামের মুন্সিপাড়ার নমির উদ্দিনের ছেলে সোহানুর ইসলাম (২২), ওয়াশিম হকের স্ত্রী মোর্শেদ বেগম ও তার শ্যালিকা পার্শ্ববর্তী বীরগঞ্জ উপজেলার খোদ্দ পলাশবাড়ী পূর্বপাড়ার আমিনুল ইসলাম ওরফে সাদ্দামের স্ত্রী মেরিনা বেগম (২৩)। 

শুক্রবার (০৭ জুন) রাতে উপজেলার জয়ন্তিয়া ঘাট এলাকা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী ওয়াশিম হককে ওসি মোজাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা আটক করে। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে জড়িত অন্য আসামীদের আটক করে থানা পুলিশের এসআই আব্দুস সামাদ, এসআই ইবনে ফরহাদ, এসআই  চয়ন রায়, এসআই আমির হোসেনসহ থানা পুলিশের সদস্যরা। এ সময় ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীর শ্যালিকার বীরগঞ্জ উপজেলার খোদ্দ পলাশবাড়ি পূর্বপাড়া বাড়িতে রক্ষিত নগদ ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা ও প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। 

গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের জমিদারনগর এলাকায় আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এই অভিনব চুরির বিষয়টি বুধবার প্রচার হলে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। এরপরে নড়েচড়ে বসে থানা পুলিশ।

জানা যায়, ভুক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাক ও চুরির পরিকল্পনাকারী ওয়াশিম হক একই পাড়ার বাসিন্দা। তাঁরা সম্পর্কে মামা-ভাগিনা। থানা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চুরির ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা জানায়, হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এই চুরির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ওয়াশিম হক কারাবন্দী ছিলেন। এই সময়ে চোরচক্রের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। গত ৩ মাস আগে জামিনে বেড়িয়ে এসে কারাগারে পরিচয় হওয়া চোরচক্রের সাথে ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে চুরির পরিকল্পনা তৈরী করেন। এই পরিকল্পনার ভিত্তিতে এই চক্রের সদস্যরা গত মঙ্গলবার (৪ জুন) উপজেলার ডাঙাপাড়া চৌধুরী পাড়ায় ভুক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাকের রান্নাঘরে লবণ ও হলুদের সাথে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে ঐ পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞান করে। এরপরে ভুক্তভোগীর শয়নকক্ষের ড্রয়ার থেকে নগদ অর্থ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চুরি করে মূল পরিকল্পনাকারী ওয়াশিম হকসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ব্যক্তি ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। পরে ওয়াশিম হক টাকা সংরক্ষণের জন্য পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার করে। 

 

মূল পরিকল্পনাকারী ওয়াশিম হককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে থানা পুলিশের কাছে স্বীকার করে যে তাদের ধারণা ছিল চুরির সময়ে ২-৩ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে কিন্তু এত টাকার বান্ডিল দেখেও তাঁরাও অবাক হয়ে যায় বলে জানিয়েছে। ভুক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার ব্যবসা ও কৃষিপণ্য বিক্রির প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা চুরি করে কেউ পরিকল্পিতভাবে আমাকে পথে নামার জন্য এই কাজ করেছে। সবকিছু হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে। তিনি আরো বলেন, জড়িতদের আটক করায় থানা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং জড়িত সকলের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও পুরো টাকা উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি। 

এ বিষয়ে খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম বলেন, এই চুরির ঘটনার পর থেকেই থানা পুলিশ রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে। বিভিন্ন তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে নগদ ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকাসহ মূল পরিকল্পনাকারী ওয়াশিম হকসহ ৪ জনকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই চুরিতে জড়িত অন্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে থানা পুলিশ কাজ করছে। সেই সাথে রান্নার উপকরণ লবণ ও হলুদ অরক্ষিত না রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। 

27