বাংলাদেশ

তিস্তার বালুচরে ফলছে সোনা

রবিউল আলম বিপ্লব,পীরগাছা   রংপুর

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪


| ছবি: 

এক সময় তিস্তার জাগি ওঠা চরত পানি বেগর খালি বাদাম আর কাউন আবাদ হতো। এখন শ্যালো মেশিন বসিয়ে সউগ আবাদেই করা যাচ্ছে। ফলনও বাম্পার হচ্ছে। কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়ার চরের আনোয়ার হোসেন। শুধু আনোয়ার হোসেন নন, তার মতো শতশত কৃষক তিস্তার জেগে ওঠা চরের বাদাম, গম, ভুট্টা, ধান, মরিচ ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি আবাদ করছে। ফসলি জমিতে সেচ দিতে চরেই বসানো হয়েছে শ্যালো মেশিন। এতেই ফুটন্ত বালুচর কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর খরস্রোতা তিস্তার দু'পাড়ের বাসিন্দাদের বন্যায় ফসলহানী ও নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হতে হয়। ধুধু বালুচরে পানির অভাবে তেমন কোন চাষাবাদ করা যেতো না। ফলে তিস্তার দু'পাড়ের বাসিন্দাদের দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হতো। অনেকে সহায় সম্বল হারিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভাসমানদের তালিকায় নাম লেখাতেন। সেই অভিশপ্ত তিস্তা এখন মানুষের আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরের বালু এখন সোনার সাথে তুলনা করা হচ্ছে। তিস্তা নদীর অধিকাংশ এলাকাজুড়ে এখন চর। নদী পাড়ের মানুষদের ভাগ্যের চাঁকা ঘুরতে শুরু করেছে। সেচ সুবিধার জন্য শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা। এতে প্রায় প্রত্যেকেই চরের জমিতে ফসল ফলিয়ে সাবলম্বী হচ্ছেন।
উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া গ্রামের কৃষক আনারুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসমে বন্যা আর নদী ভাঙন ও শুষ্ক মৌসুমে ধুধু বালু চরের কারণে অনেকে নিঃস্ব হয়েছে। আগ্রাসি তিস্তার কারণে অনেকে এলাকা ছেড়েছে। এখন তিস্তা মরা খালে পরিণত হওয়ায় প্রচুর চর ভেসে উঠেছে। চরগুলোতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেচ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলানো হচ্ছে।
শিবদেব গ্রামের আলু চাষি মতিয়ার রহমান জানান, তিস্তার চরে এখন সোনা ফলছে। চরে প্রায় সব ধরনের ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। তবে ফসল উৎপাদনে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়।
চরের আর এক চাষি আবুল হোসেন বলেন, আগে চরের জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হতো না। শুধু বালুর ক্ষেত নামে পরিচিত বাদাম ও কাউন চাষাবাদ করা হতো। এখন সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকায় ধান, গম ও ভুট্টার মতো ফসল উপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার উপর দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এ তিন উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হন। নদীর দুই তীর প্লাবিত হয়ে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। শত শত একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়। একই সাথে তীব্র নদী ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে সেই তিস্তার চরে ফলানো হচ্ছে বাদাম, গম, ভুট্টা, ধান, মরিচ ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি। ফলে চারদিকে এখন সবুজের সমারোহ। চরের ফসলের গুণগত মান ভাল হওয়ায় বাজারে চাহিদা ও দাম বেশী। তিস্তা চরের বাসিন্দারা এক সময় দুর্বিষহ জীবন যাপন করতেন। এখন তারাই চরের ফুটন্ত বালুতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা সত্যি কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রণোদনাসহ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চরে এখন সব ধরনের চাষাবাদ হচ্ছে। নদী শাসনের মাধ্যমে চরের এসব ফসলি জমিতে পরিকল্পিত চাষাবাদ করা গেলে রংপুরের কৃষি অর্থনীতি আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।

29