বাংলাদেশ

রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়ায় ফুলে ফুলে সেজেছে খানসামার প্রকৃতি

জসিম উদ্দিন, খানসামা   দিনাজপুর

০৪ মে ২০২৪


| ছবি: 

‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গান আমাদের স্মরণ করে দেয় কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য। বৈশাখের আকাশজুড়ে যখন তীব্র তাপদাহ বইছে, ঠিক সেসময় প্রকৃতিতে একরাশ সৌন্দর্যের রঙিন আভা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার গুচ্ছ। রক্তরাঙা লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়ার ফুলে ফুলে সেজেছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রকৃতি। দিনভর কাঠফাটা রোদের আলো গায়ে মেখে চোখ ধাঁধানো কৃষ্ণচূড়ায় গ্রীষ্মের প্রকৃতি ও পরিবেশ যেন নতুন আবির মেখেছে। বৈশাখের রৈদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে।  গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিষ্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য্য।

গতকাল শনিবার উপজেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর, এমনকি বাড়ির উঠানেও অনন্য রূপ ধারণ করে ফুটেছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। গাছে রক্তিম আভা নিয়ে জেগে থাকা কৃষ্ণচূড়া দৃষ্টি কাড়ছে ফুলপ্রেমীদের। প্রকৃতিপ্রেমীরাও ছুটে আসছে কৃষ্ণচূড়ার এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যের ছবি তুলছেন অনেকেই। 

এই গাছের নাম নিয়ে স্থানীয় অনেকেরই ধারণা,রাধা ও কৃষ্ণের নাম মিলিয়ে এ বৃক্ষের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর তা কম লোকই জানেন, কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খোঁজে পাওয়া ভার।

এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মে যখন এই ফুল ফোটে, এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হন। কৃষ্ণচূড়া গাছ উচ্চতায় খুব বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত উপরে উঠে। তবে এর শাখা পল্লব অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। বছরের অন্য সময় গাছগুলো চোখে খুব একটা পড়ে না। সাধারণত এপ্রিলে প্রকৃতির সবুজ পেছনে ফেলে মানুষের দৃষ্টিতে আসে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই ফুল। তখন আর খুঁজে নিতে হয় না। পথচারীদের সহজেই চোখে পড়ে কৃষ্ণচূড়ার লাল টুকটুকে ফুল। বহুদূর থেকে দেখলে মনে হয় ওই দূরে আগুন লেগেছে। কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফুলে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। 

প্রকৃতিপ্রেমী রহিমা খাতুন বলেন, রক্তিম আলো শুধু সূর্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যে আলো ছড়িয়ে পড়েছে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে। যখন কৃষ্ণচূড়া ফোটে তখন গাছের লাল-সবুজ রঙে যেন মুখর হয়ে উঠে। আর এ সময়টা আমার কাছে অন্যরকম ভালো লাগে। এ অনুভূতির কথা মুখে বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। খানসামা উপজেলায় কি পরিমাণ কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ রয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য, উপাত্ত না থাকলেও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, অতীতে গ্রাম-গঞ্জে হাজার হাজার কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ থাকলেও সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা এখন শতাধিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি করে কৃষ্ণচুড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন বলেন,‘আমাদের এ উপজেলার প্রায় সব জায়গায় কৃষ্ণচূড়া গাছ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ সেসব গাছ তদারকি করে। সৌন্দর্যবর্ধক এই গাছ রক্ষায় আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।’

64