বাংলাদেশ

জনপ্রিয় হচ্ছে ন্যানো প্রযুক্তির লিকুইড ইউরিয়া

সোহানুজ্জামান সোহান, ঘোড়াঘাট   দিনাজপুর

১১ জুন ২০২৪


| ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে কৃষকদের কাছে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লিকুইড ইউরিয়া। ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারে অপচয় কমিয়ে গাছকে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি সরবরাহ করতে এই লিকুইড ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়। এই অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ইউরিয়া সারের অপচয় রোধ করা সম্ভব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এতে শুধু অপচয় কমে এমন নয়, গাছের পুষ্টি যেমন নিশ্চিত করা এবং ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। 

জমিতে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সার ব্যবহারের বিকল্প নেই। গোয়ালঘরের গোবর ব্যবহারের যুগ থেকে কারখানার রাসায়নিক সারের যুগ পর্যন্ত ফসল উৎপাদন পদ্ধতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। সেই ধারাবাহিকতায় উৎপাদননির্ভর অধিক ফলন নিশ্চিতে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার সময়ের দাবি। গবেষণায় দেখা গেছে, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সুরক্ষার জন্য কৃষক জমিতে যে সার ব্যবহার করেন, তার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অপচয়ের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী জলাশয় বা বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কৃষিতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব। গতানুগতিক ধারায় চাষাবাদে অত্যধিক রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, যা ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। এর মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান ও বালাইনাশক নিয়ন্ত্রিত উপায়ে উদ্ভিদের শোষক অংশে অবমুক্ত হয়, যা অনেকটা ন্যানো সেন্সরের মতো কাজ করে। মাটিতে প্রয়োগের পর এটি গাছের গোড়ায় জমা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী গাছকে পুষ্টি সরবরাহ করে।

এই বিষয়ে কৃষক রায়হান রঞ্জুর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ বছর তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে সুপারহিট জাতের বাঁধাকপি লাগিয়েছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তিনি ইউরিয়া সার প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলামার্ক লিমিটেড এর মাধ্যমে এই লিকুইড ইউরিয়ার নাম ও গুনাগুণ জানতে পেরে আগ্রহী হন। পরে কোম্পানির লোকের সাথে কথা বলে তিনি এর বিস্তারিত জানতে পারেন। তিনি আরও জানান, কোম্পানি তাকে ফ্রি এই লিকুইড ইউরিয়া সরবরাহ করেছে। এই লিকুইড ইউরিয়া সারের তুলনায় অনেক কম লাগে। একদিকে যেমন পরিবেশ বান্ধব অপরদিকে খরচ অনেক কম হওয়ায় পরবর্তীতে সব ধরনের ফসলে এই লিকুইড ইউরিয়া তিনি প্রয়োগ করবেন। কৃষক রায়হান রঞ্জু বলেন, তার ৪০ শতাংশ জমিতে মাত্র ৪০ এমএল করে ৪ বার এই লিকুইড ইউরিয়া প্রয়োগ করেছেন এবং আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছেন।

লিকুইড ইউরিয়া সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলামার্ক লিমিটেড এর বিজনেস ডেভলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ আলতাফ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ার ইফকো কোম্পানি থেকে এই লিকুইড ইউরিয়া ইমপোর্ট করে প্রাথমিক অবস্থায় কৃষকদের মাঝে ফ্রি দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, ঘোড়াঘাট উপজেলার ৪ জন কৃষক নারায়নপুর গ্রামের রায়হান রন্জু, লোহারবন্দ গ্রামের আমিনুল ইসলাম, বরাতিপুরের মোশারফ হোসেন ও দক্ষিন দেবীপুরের ওয়াহেদুল ইসলামকে প্রথম পর্যায়ে ফ্রি দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হলে আমরা পরবর্তীতে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করা শুরু করবো। জানতে চাইলে কোম্পানি প্রতিনিধি আরও বলেন, ৫০০ এমএল লিকুইড ইউরিয়া ৫০ কেজি ইউরিয়া সারের সমপর্যায়ের কাজ করে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান এর সাথে এ নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ন্যানো প্রযুক্তির ইউরিয়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি খুব সহজেই ফসলি জমিতে প্রয়োগ করা যায়। স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে এই প্রযুক্তির ইউরিয়া প্রয়োগ করার ফলে গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত খুব সহজেই পৌঁছায়। তাতে গাছ খুব দ্রুত এই লিকুইড ইউরিয়া গ্রহণ করতে পারে। যা গাছের দ্রুত বর্ধনে খুব সহায়ক।

52