বাংলাদেশ

হামারা কী প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পাবার নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক   রংপুর

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪


| ছবি: 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব ঘোষিত ভূমিহীনদের পূনর্বাসনের ঘোষণার প্রতিফলন ঘটেছে  মুজিব শত বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জমিসহ বাড়ি উপহার দেয়ার মধ্য দিয়ে। এই মহতী উদ্যোগই তাঁকে ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষের মনে জায়গা করে নিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এখন পর্যন্ত এই পাইলোট প্রকল্পের মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ মানুষ ভূমিহীনের তালিকা থেকে মুক্তি পেয়ে তিন শতক জমির মালিকানাসহ পেয়েছে টিন শেড পাকা বাড়ি। জনকল্যাণমুখী এই প্রকল্প চলমান থাকায় হয়তোবা সরকারের চলতি মেয়াদেই  ভূমহীনের অভিশপ্ত অধ্যায় থেকে মুক্তি মিলবে বাংলাদেশের।সেই ধারাবাহিকতায় বাদ পরেনি রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলাও। এই উপজেলার  নয়টি ইউনিয়নের সাতটি ইউনিয়ন দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত হওয়ায় জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এই উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের সংখ্যা নিসন্দেহে অনেক বেশি।তারই পেক্ষিতে কথা হয় গংগাচড়া উপজেলার কতিপয় ভূমিহীন ছিন্নমূল মানেষের সাথে।

" হামরা কোন দিন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পামো?  হামার কপালোত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি জোটে নাই । মুই( আমি) তো জন্মের পর থাকি দেখচুং (দেখেছি) মোর ( আমার) বাপ মানুষের খুলিত (উঠানে) বাড়ি করি আছলো ( ছিল) । এলা তিস্তার চড়োত মানুষের মাটিত বাড়ি করি আছে। আর মুই মাইয়া ছওয়া (বউ বাচ্চা)  নিয়া রাস্তাত বাড়ি করি আছুং ( আছি)। বেটা বিয়ার লাইক ( বিবাহ যোগ্য) হইছে এলাও হামরা (এখনো আমরা)  একই ঘরোত থাকি যেকনা (যেটুকু)  কামাই করং তাতে সংসারে চলে না। মাটি কিনি বাড়ি করং কেমন করি।   হামার ভিতি ( দিকে) কায়ো (কেউ) দ্যাখে না ।" কথাগুলো আবেগের স্বরে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলছিলেন গংগাচড়ার ইউনিয়নের ধামুর বোল্লার পারগামী রাস্তার ধারে  বসবাসকারী সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে শাহাজালাল (জটু)। তারই প্রতিবেশী আজিজুল ইসলাম ( মোচারু) 'র জীবনের গল্প আরও করুণ ও বেদনা বিধূর। আজিজুল পেশায় একজন রেডিও, টিভি'র মেকানিক্স। আধুনিকতার আশীর্বাদে রেডিও এবং টিভির ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় তারও যেন কপাল পুঁড়েছে। কোন রকমে বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলেও ছোট মেয়ের বিয়েটা আটকে আছে ভূমিহীনের অভিশাপে। আজিজুল প্রায় তিন দশক হয় রাস্তার ধারে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। সেজন্যই বিবাহ যোগ্যা মেয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও এখনো সম্ভব হচ্ছে না মেয়ের বিয়ে দেওয়া। এবিষয়ে আজিজুলের সাথে কথা বললে চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন," ভাই মোর জীবন রাস্তাত বাড়ি করি থাকিয়ায় কাটি গেল। বিপদোত পরছুং ( পড়েছি) বেটিটাক ধরি। মুই রাস্তাত বাড়ি করি আছুং ( আছি) জমিজমা নাই, সেই জন্যে বেটির (মেয়ের) বিয়াও হয় চোল না ( হচ্ছে না) । আল্লাহ যে কোন দিন মোক (আমাকে)এই বিপদ থাকি উদ্ধার করে। " একই বিষয়ে কথা হয়  বড়বিল ইউনিয়নের পাকুড়িয়া সর্দার পাড়া গ্রামের মৃত- জহির উদ্দীনের ছেলে  আজিজুল ইসলাম (গাটা)'র সাথে। তিনি বলেন, "মুই( আমি) মোর( আমার) জীবনে দশবার বাড়ি ভাঙছুং। মেলা মানুষোক সরকার  জমিসহ বাড়ি  দেয়চোল (দিচ্ছে) । মোক (আমাকে) বাড়ি দিলে মোর (আমার) খুব উপকার হয়। আইজ অমুকের খুলিত( উঠান), কাইল তমুকের খুলিত বাড়ি করি থাকতে থাকতে শ্যাষোত রাস্তাত বাড়ি করচুং (করেছি) । "  এই গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে গান্নারপাড়ের মৃত আলম মিয়ার স্ত্রী  আছিয়া বেওয়া,ভুটকা'র ছাবি উদ্দীনের ছেলে আলম মিয়া, আলমবিদিতর ইউনিয়নের হাজীপাড়া এলাকার   মৃত - শাহাজাদা'র ছেলে শফিকুল ইসলাম,বড়বিল ইউনিয়নের বাগপুর এলাকার শফিকুল ( নাড্ডা)' র ছেলে অফিজ উদ্দীনের মত শত শত ভূমিহীনদের হিসেব এখনও রয়ে গেছে উন্নয়ন গল্পের আড়ালে।  এবিষয়ে গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদতামান্না বলেন,  যারা এখন পর্যন্ত রাস্তার ধারে বাড়ি করে আছেন, তারা যেন  সহকারী কমিশনার (ভূমি) অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করে। তাহলে আমরা চাহিদার প্রেক্ষিতে তালিকা পাঠাব। তারা যেন  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।  একই বিষয়ে কথা হয় গংগাচড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) নয়ন কুমার সাহার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, " আমরা মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীন ( ক - শ্রেণি)  ভুক্ত নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে উপজেলায় চার ধাপে  পুরাতন ব্যারাক ব্যতীত ছয় শত পরিবারকে পুনর্বাসন করেছি। এই প্রকল্প চলমান আছে পর্যায়ক্রমে আরও অনেক ভূমিহীনকে আমরা এই প্রকল্পের আওতায় আনতে পারব। জেলা প্রশাসক মহোদয় গংগাচড়া উপজেলাকে ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা ঘোষণা দেয়ার প্রস্তাব দিলেও, আমি স্যারকে অনুরোধ করেছি এই উপজেলায় অসংখ্য মানুষ এখনও ভূমিহীন রয়েছে।  তাই এই উপজেলাকে আমরা এখনই ভুমিহীন ঘোষণা করে অসংখ্য ভূমিহীন  পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত করতে চাই না। " উত্তর জনপদের দুঃখ তিস্তা  নদী বেষ্টিত এই উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল যেহেতু প্রতিবছরই ভাঙনের ফেলে  নদী গর্ভে বিলীন হয়, সেজন্য প্রতি বছরই বাড়ে ভূমিহীনের সংখ্যা। তাই জেলার অন্যান্য উজেলার চেয়ে উল্লেখ্য উপজেলাকে প্রাধান্য দিয়ে  প্রকৃত বাস্তবতা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করে ভূমিহীনদের পূনর্বাসনের মধ্যদিয়ে তাদের  মুখে হাসি ফুটবে বলে সকলের বিশ্বাস। 

19