বাংলাদেশ

গাইবান্ধায় নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

শাহাদত হোসেন মিশুক   গাইবান্ধা

১৭ মার্চ ২০২৪


| ছবি: 

রমজান মাসে গাইবান্ধার বিভিন্ন হাটবাজারে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম কমলেও অনেক পণ্যের দাম বৃদ্ধি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম গড়ে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে জিনিষপত্রের দাম আরো বেশি। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজার ও হর্কাস মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চিত্র। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি বিআর-২৮ জাতের চাল ৪৮ টাকা থেকে ৫৫ টাকা, সোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, প্রতিকেজি চিনি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, প্রতিকেজি রসুন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, প্রতিহালি লেবু ১৫ থেকে ২৫ টাকা, প্রতিকেজি আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, প্রতিকেজি বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, প্রতিকেজি আদা ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, প্রতিকেজি দেশী মুরগি ৪৮০ থেকে ৫৭০ টাকা, প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি খেজুর ও মসলার দামও অস্বাভাবিকহারে বেড়ে গেছে। তবে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা এবং প্রতিকেজি সোনালী মুরগি ২৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
গাইবান্ধা শহরের হর্কাস মার্কেটে আসেন মোহাম্মদ আলী (৫৭)। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি গ্রামে। তিনি শহরের ডিবি রোডে খিলি পানের দোকান করেন। তিনি বলেন, অল্প বেতনের চাকুরি করতাম। গতবছর অবসরে যাই। বর্তমানে শহরের ডিবি রোডের ফুটপাতে পানের দোকান দিয়েছি। যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে। রমজানের বাজার করতে এসে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। প্রতিটি জিনিসের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাড়ি থেকে বাজারের জন্য যে টাকা এনেছিলাম, তা দিয়ে অর্ধেক খরচই হলো না। পরিবারকে গিয়ে কি বলবো। 
একই মার্কেটে আসা সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, আমরা চাকুরিজীবি। সারাবছর সবকিছু কিনে খেতে হয়। যে টাকা নিয়ে বাজারে আসছি তা দিয়ে ভালো বাজার করতে পারলাম না। প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। বাধ্য হয়ে অল্প অল্প করে জিনিসপত্র কিনলাম। তিনি অভিযোগ করেন, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। 
ব্যবসায়ী মজনু মিয়া বললেন, আমরা জিনিসের দাম বাড়ায়নি। বেশি দামে সবকিছু কিনতে হয়েছে। তাই বেশিদামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
হর্কাস মার্কেটে থেকে শহরের পুরাতন বাজারে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেল। ক্রেতাদের এক দোকান থেকে অন্য দোকানে যেতে দেখা যায়। সেই সাথে ক্রেতা ও ব্যবসায়ী দর কষাকষি করছেন। জেলার সব গুলো বাজারের একই অবস্থা।
পুরাতন বাজারে আসা গাইবান্ধা সদর উপজেলার কিশামত ফলিয়া গ্রামের মিনারুল মিয়া বলেন, এই পাইকারি বাজারে আসলাম, দাম একটু কম পাবো। কিন্তু গরুর মাংস, মুসুর ডাল, আলু, রসুন, সোয়াবিন তেল বেশি দামে কিনতে হলো। কেবল ব্রয়লার মুরগির দাম কম দেখলাম। পুরাতন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সাজু মিয়া বললেন, দাম কমে গেছে। ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনছেন। গাইবান্ধা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাকছুদার রহমান বলেন, রমজানের দোহাই দিয়ে জিনিসপত্রের দাম যাতে না বাড়ানো হয়, সেজন্য রোজার আগেরদিন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। চেম্বারের উদ্যোগে বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে।  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভিন বলেন, রমজান মাসের প্রথমদিন থেকে প্রতিদিনই বাজার মনিটর করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে, নিত্যপণ্যের কোনো জিনিষের দাম যাতে না বাড়ানো হয়। দাম বৃদ্ধি করায় জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। তারপরও কেউ দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

26