বাংলাদেশ

আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতায় কোলকাতা থেকে বাইসাইকেলে সঞ্জয় খানসামায়

জসিম উদ্দিন, খানসামা   দিনাজপুর

০৯ জুন ২০২৪


| ছবি: প্রতিনিধিঃ

দিনে দিনে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। বাদ যাচ্ছে না স্কুল পড়ুয়ারাও। সমাজে এই মারাত্মক প্রবণতাকে রুখতে মাইলের পর মাইল সাইকেল নিয়ে ছুটে চলেছেন কলকাতার বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাস। তিনি চার বছর ধরে 'আত্মহত্যাকে না বলি' বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে সাইকেল চালিয়ে ভারতের ২৬টি রাজ্য ভ্রমণ করেন। তবে, শুধু ভারতে তার সচেতনতা কার্যক্রম থেকে নেই। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন বাংলাদেশে।

এর পিছনে রয়েছে এক করুণ কাহিনি। সঞ্জয় নিজেও ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।কোনওভাবে ব্যর্থ হন তিনি। বুঝতে পারেন নিজের ভুল।এখান থেকে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি সাইক্লিং শুরু করেন। এমনকি মানুষের মনে চেতনা আনতে দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়ান সঞ্জয়। ‘আত্মহত্যা যন্ত্রণার শেষ করে না, এটি অন্য কাউকে দিয়ে যায়’ এই মন্ত্র বাংলা, হিন্দি, ইংরেজিতে লিখে পোস্টার বানিয়ে সাইকেলে লাগিয়ে ছুটছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গাইঘাটার থানার ঠাকুরনগরের বছর তেত্রিশের যুবক সঞ্জয় বিশ্বাস।

জানা গেছে, বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার চিতশী গ্রামে সঞ্জয় বিশ্বাসের আদি পৈত্রিক ভিটা রয়েছে। ৪৭ এর দেশ ভাগের পর তার দাদা ভারত চলে যায়। পশ্চিমবঙ্গের  উত্তর ২৪ পরগোনা জেলার গাইঘাটা থানার গুটরি গ্রামে তার পূর্বপুরুষ বসতি স্থাপন করেন। সেখানেই এখন তাদের নিবাস। তার পিতার নাম সুমন্ত বিশ্বাস।

রবিবার (৯ জুন) বিকেলে বাংলাদেশের ৪৯তম জেলা হিসেবে দিনাজপুরের খানসামায় অবস্থান করেন। এ বিষয়ে সঞ্জয় বিশ্বাস সকালের বাণীকে বলেন, 'ভারতের মতো জনবহুল দেশে আত্মহত্যা একটি ভয়াবহ সমস্যা। যে কারণে আমি সাইকেলে চালিয়ে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি।'

তিনি বলেন, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাবড়া শ্রী চৈতন্য কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করি। এরার উত্তর প্রদেশের আমেথিতে ফাস্টফুডের ব্যবসা শুরু করি। করোনার প্রভাবে আমরা এই ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এরপর হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছিলাম কিন্তু, তাতে সফল হইনি। তারপরই আত্মহত্যার খারাপ দিক সম্পর্কে অবগত হই। বাবা–মায়ের মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে নিজের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে পথে নামি। করোনা পর্ব মিটতেই সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। 

ওই যুবক আরও বলেন, আত্মহত্যা কোন সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। আত্মহত্যা করার পরে আপনজন যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই আমি এই আত্মহত্যার প্রবনতা থেকে সকল নর-নারীকে রক্ষায় প্রচারাভিযানে নেমেছি। আমি বাংলাদেশে এসে কয়েকটি জেলায় ঘুরেছি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচারাভিযান চালিয়েছি। আমি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রচারাভিযান চালাতে চাই। হতাশাগ্রস্তদের আত্মহত্যার পথ থেকে ফেরাতে চাই। কারণ আত্মহত্যার মত অস্বভাবিক মৃত্যু পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র  প্রত্যাশা করে না। 

 আমার দেশের ইতিমধ্যে ২৪টি রাজ্য, বাংলাদেশ ঘুরে ফেলেছি। বাংলাদেশ গিয়ে আত্মহত্যা না করা নিয়ে বক্তব্যও পেশ করেছেন তিনি। মিলেছে প্রশংসাপত্র ও ক্রেস্ট। সঞ্জয় আরও বলেন, কঠিন পরিস্থিতিতে অনেকেই আমায় বলে রোজ সাইকেল নিয়ে ঘুরতে। সেই থেকেই এই পরিকল্পনা। তাঁর এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বলিউড তারকা সোনু সুদ। মুম্বাইয়ে অভিনেতা নিজে দেখা করে সঞ্জয়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 

কীভাবে চলে এই সাইকেল যাত্রার বার্তা? সঞ্জয় বলেন, এখন পরিচিতি বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশ, পণ্ডিচেরির আশ্রম থেকে আমাকে সাহায্য করা হয় এই সাইকেল যাত্রার জন্য। প্রচুর পরিচিত মানুষ জুটেছেন। তাঁরাও সাহায্য করেন।

বাংলাদেশ সফরে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যেখানেই যাচ্ছি মানুষ আপনজনের মতো কাছে টেনে নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বাইকার ও সাইক্লিং গ্রুপের সদস্যরাও আমাকে সাহায্য করছেন।' 

10