বাংলাদেশ

কবর খুড়তে গিয়ে মিললো ১৫ বছর আগের অক্ষত মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক   রংপুর

০১ জুন ২০২৪


| ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যুর পনেরো বছর পর কবরে মিললো অক্ষত মরদেহ। কাফনের কাপড়টুকুতেও লাগেনি সামান্য দাগ। চারপাশে চিকচিক করছিল বালু। এ ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর মহানগরীর নব্দীগঞ্জ গোদা-শিমলা এলাকায়। বিরল এই ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে, এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। দুনিয়ায় যারা আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলেন তাদের হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহই নিয়ে থাকেন। তাদেরকে কোন কিছুই স্পর্শ করে না। ওই ব্যক্তির বেলায়ও হয়েছে তাই।

ঘটনাটি বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেলের। রংপুর-কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে রংপুর মহানগরীর নব্দীগঞ্জ গোদা-শিমলা এলাকায় গ্যাসের সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ চলছিল। এ কারণে সেখান থেকে কয়েকটি কবর স্থানান্তরের উদ্যোগ নেন স্বজনরা। দুইদিনে ৪টি কবর স্থানান্তরের পর আরেকটি কবর খুড়তেই ঘটে আশ্চর্যজনক ঘটনা। দেখা গেল, অক্ষত অবস্থায় ধবধবে সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো আছে লাশ।

স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, ২০১০ সালে সেখানে কবরস্থ করা হয়েছিল মরহুম আব্দুস সামাদকে। পনেরো বছর আগের সেই পুরনো কবরটি স্থানান্তর করতে গিয়ে এ ঘটনায় অবাক তারা। দ্বিতীয় বার স্বচোক্ষে অবিকল অভিভাবককে দেখতে পারায় অবাক মরহুমের স্বজনসহ পুরো গ্রামবাসী।

জানা গেছে, ১২৩ বছর বয়সে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় নিজ বাড়িতে মারা যান আব্দুস সামাদ। ছিলেন কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। তিনি আট ছেলে ও চার কন্যাসন্তানের জনক। এরমধ্যে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে মারা গেছেন।

আব্দুস সামাদের ছেলে জানান, আমার বাবা যেদিন মারা যান, সেদিন বাড়ির পাশের পুকুরে একাই তিনি গোসল করেন। এরপর তিনি পুকুর থেকে উঠে এসে চেয়ারে বসলে ওই অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি ধার্মিক মানুষ ছিলেন। কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনের পর তাকে পাশে অন্যদের সাথে দাফন করা হয়। তার শরীরের সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। শুধু শরীরের চামড়াটা শুকিয়ে গেছে।

আরেক ছেলে জানালেন, তার বাবার শরীরের কোথাও কোনো পচন ধরেনি। এমনকি কাফনের কাপড়ও নষ্ট হয়নি। তাকে কোন কিছুই স্পর্শ করেনি। হজের ইহরামের কাপড় দিয়ে তাকে কবরস্থ করা হয়েছিল। যেভাবে তাকে কিবলামুখী করে রেখেছিলাম সেভাবেই কবরে ছিল।আল্লাহদুলিল্লাহ, এটা আল্লাহর বান্দার প্রতি তাঁর রহমত ছাড়া আর কিছুই নয়।

স্থানীয় একজন জানান, পনেরো বছর আগে আমরা তাকে কবরস্থ করার সময় যেভাবে দাফন করেছিলাম। সেদিন ওই অবস্থায় তার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য লাশের হাত-পায়ের সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভিড় জমান আশপাশের এলাকার মানুষও। তারা জানান, আগোগোড়া পরহেজগার মানুষ ছিলেন আব্দুস সামাদ। এলাকার সব থেকে জনহিতকার মানুষ হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। ছিলেন তাবলীগ জামায়াতের সাথে যুক্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে দিতেন ইসলামের দাওয়াত।

এ ধরণের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়, বলছেন ইসলামিক চিন্তাবিদরা। যারা দুনিয়াতে সবকিছু ভুলে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলেন তাদেরকে কবরে সুসংবাদ দেয়া হয়। কবর পোকা-মাড়কের ঘর হলেও তাদের কোন কিছুই স্পর্শ করে না। শুধু তাই নয় ইসলামের পথে থাকা ওইসব ব্যক্তির দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিজেরই বলে জানান ধাপ সাতগাড়া বায়তুল মোকাররম মডেল কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনম হাদিউজ্জামান।

তিনি জানান, আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে তার ভালো কাজের জন্য পুরস্কার হিসেবে এটা দিয়েছেন। কারণ এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন যারা আল্লাহর হয়ে যান, আল্লাহ তার হয়ে যান। এ ধরণের মানুষকে কবরে কোন কিছু স্পর্শ করবে না এবং কবরেও তার রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহই করেন।

139