বাংলাদেশ

অসময়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন, দিশেহারা মানুষজন

নিজস্ব প্রতিবেদক   কুড়িগ্রাম

২৩ মার্চ ২০২৪


| ছবি: 

পরিনা বেগম। বয়স আনুমানিক ৩০ ছুঁই ছুঁই। তিন সন্তানের জননী তিনি। স্বামী পান ব্যবসায়ী। স্বামী সন্তান নিয়ে ভালোই কাটছিল সংসার। কিন্ত অসময়ে সর্বগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র হানা দেয় তার বসতভিটায়। তাদের একমাত্র সম্বল এই বাড়িটি। সামান্য কিছু আবাদি জমি থাকলেও সেটি ব্রহ্মপুত্র গ্রাস করে ফেলছে। এতে চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়ে পরিবারটি। পরিনা বেগমের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দুর্গম নামাজের চরে। শুধু পরিনার পরিবার নয়, ওই এলাকার কয়েক'শ পরিবার ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের কবলে পড়েছে। পরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ভাঙনরোধে বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হয়। এ কাজে ওই গ্রামের কয়েক'শ নারী-পুরুষ অংশ নেন। টানা ৬দিনে প্রায় ১৫ হাজার বালু ভর্তি বস্তা নদীতে ফেলেন তারা। পরিনা বেগম বলেন, "নদী ভাঙতে ভাঙতে চোখের পলকেই বাড়ির কাছত আসি গেইল। এই বাড়ি ভাঙলে আমগোর যাওনের জায়গা নেই। কোলের ছৈল রাইখা সারাদিন বস্তায় মাটি ভইরা ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। গত ৬দিন ধরে গ্রামের ব্যাকটি (সবাই) এই কাজ করতেছি। খুব কষ্ট হয়, তবুও যদি ভিটেমাটি রক্ষা হয়।"

সরেজমিনে জানা গেছে, গত এক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সাহেবের আলগা ইউনিয়নের উত্তর নামাজের চর থেকে দক্ষিণ নামাজের চর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙনের শিকার হয়েছে শতাধিক পরিবার। এ ছাড়া কয়েক হেক্টর আবাদি জমি ও ফসলের ক্ষেত ব্রহ্মপুত্রের পেটে চলে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ নামাজের চর, খেয়ার চরসহ সোনাপুর গ্রামের প্রায় ১২০০ বসতবাড়ি। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে চরাঞ্চলের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী খেয়ার চর বাজার, পুলিশ ফাঁড়ি, দক্ষিণ নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নামাজের চর মহাবিদ্যালয়টিও নদী গর্ভে চলে যাবে বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা।

ওই এলাকার মো. নিমায় চাঁদ, আয়নাল হক, আব্দুর রব, আব্দুল গফুরসহ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নদরে পানি কম থাকলেও হঠাৎ তীব্র ভাঙন শুরু হয়। উপায়ন্তর না পেয়ে এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় প্রথমে ২৫০০ বস্তা সাড়ে ১২টাকা করে ক্রয় করা হয়। পরে স্থানীয় নারী-পুরুষের স্বেচ্ছাশ্রমে এসব বস্তা মাটি ভরাট করে নদীতে ফেলা হয়। এভাবে ৬ দিনে প্রায় ১৫ হাজার মাটি ভর্তি বস্তা নদে ফেলেন বলে জানান তারা।

ওই এলাকার রাহেলা বেগম, মোছা. বেগম, ছমিলা বেগম, সুখি খাতুন জানান, কেউ মাটি কাটি আবার কেউ বস্তা ভরি, তবুও ভাঙন ঠেকাতে পারছি না। এভাবে ৬ দিন ধরে বস্তায় মাটি ভরে নদীতে ফেলতেছি। রমজান মাস, রোজা নিয়ে সবাই ভাঙন রোধে কাজ করতেছি। খুব কষ্ট হয়। খেয়ার চর এলাকার কামাল মিয়া জানান, 'আমাদের বাপ-দাদার জনমে দেখি নাই অসময়ে এভাবে নদী ভাঙে। যেভাবে ভাঙছে যদি রক্ষা করা না যায় তাহালে খেয়ার চর বাজার নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।'

এদিকে গত শুক্রবার ভাঙন কবলিত নামাজের চর এলাকা পরিদর্শনে যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধ গোলাম হোসেন মন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার, জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মতি শিউলি। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার বলেন, স্থানীয়রা তদের নিজস্ব উদ্যোগে মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন। আমরা সরেজমিনে দেখেছি, সেখানকার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত স্থায়ী ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে। 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, এমপি মহোদয়ের উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর কাজ চলমান রয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাঙন রোধে স্থানীয় লোকের সহযোগিতায় আমাদের এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর কাজ চলছে। প্রয়োজনে আরো ফেলা হবে। চলতি সপ্তাহে টেন্ডারের ৮০০মিটার কাজ শুরু হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা বলেন, ওই এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙন রোধে সাড়ে ৬ কোটি টাকা বাজেট দিয়েছেন এর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে টেন্ডারে কাজ শুরু হবে।
 

21