বাংলাদেশ

সর্বজনীন পেনশন করছি, টেনশন মুক্তি আছি

নিজস্ব প্রতিবেদক   রংপুর

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪


| ছবি: 

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের মিলন মিয়া পেশায় কৃষক। ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সমতা স্কিম খুলেছে। মিলন সরকারে ভাষ্য, ‘সর্বজনীন পেনশন করছি, টেনশন মুক্ত আছি। সরকার নিজেই এই বীমার দায়িত্ব নিছে, টাকা হারার, মাইর যাওয়ার কোনো চিন্তা নাই। নিশ্চিত ভবিষ্যতে এর ফলাফল পাবো। এই আশায় স্কিম খুলছে। আশেপাশের মানুষোকও খুলার কওছি।’ শুধু মিলন মিয়াই নয়; সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে আনতে জোড় প্রচেষ্টা প্রচারণ শুরু করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল রানা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা পরিষদ হলরুমে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত অবহিতকরণ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় শিক্ষক, পাঁচ ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন ডিজিটাল উদ্যোক্তা, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা, ইমাম, কৃষক, উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বেসরকারি এনজিও’ কর্মকর্তারা অংশ নেয়। সভায় সর্বজনীন পেনশনের বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরে বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সকলের মাঝে সর্বজনীন পেনশনের সুবিধার বিষয়টি ছড়িয়ে দিয়ে রেজিষ্ট্রেশনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আহ্বান করেন।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য ২১টি দিক রয়েছে জানান তিনি । এগুলো হচ্ছে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীগণও এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের আপাতত নতুন জাতীয় পেনশন-ব্যবস্থার বাইরে রাখা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন, প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি স্বেচ্ছাধীন থাকবে, যা পরবর্তী সময়ে বাধ্যতামূলক করা হবে, ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন, প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে।

এ ছাড়াও সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে, মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে, প্রবাসী কর্মীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা জমা দিতে পারবেন, সুবিধাভোগীরা বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করবেন, সুবিধাভোগীরা আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে চাঁদা হিসেবে বাড়তি অর্থ (সর্বনিম্ন ধাপের অতিরিক্ত যেকোনো অঙ্ক) জমা করতে পারবেন, পেনশনের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা অর্থাৎ ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন দেওয়া হবে, পেনশনধারীরা আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগপর্যন্ত পেনশন-সুবিধা ভোগ করবেন, কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে নিবন্ধিত চাঁদা দানকারী মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা প্রচার প্রচারণা শুরু করেছি। যাদের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি, জনসম্পৃক্ততা ভালো তাদের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুবিধার বিষয়টি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষকে সর্বজনীন পেনশন চালুর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এখানে জাতীয় ধর্ম, বর্ণ কোনে কিছুর ভেদাভেদ নেই। ভবিষ্যৎ আর্থিক নিশ্চয়তা কথা ভেবে প্রতিটি মানুষকে এই স্কিমের আওয়তায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতি মধ্যে তারাগঞ্জ উপজেলায় ১৫ জন সর্বজনীন পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন করেছেন। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরেও দেশের নাগরিকদের পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে যাচ্ছে সরকার। দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা। এর জন্য আইন ও বিধি প্রণয়ন এবং তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছেন সরকার।

19