বাংলাদেশ

দুই চিকিৎসককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

নিউজ ডেস্ক ‍   ঢাকা

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪


| ছবি: সংগৃহীত

খৎনা করতে গিয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিন আয়হামের (১০) মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসককে জেলগেটে দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক রুহুল আমিন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন। আসামিরা হলেন— জে এস হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক এস এম মুক্তাদির ও চিকিৎসক মাহাবুব মোরশেদ।

দুই চিকিৎসককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাতিরঝিল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপ-পরিদর্শক এশারত আলী জানান, আসামিদের সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় তাদের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। পরবর্তীতে আদালত অভিযুক্ত দুই চিকিৎসককে জেলগেটে দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন ডা. এস এম মুক্তাদিরের তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার রাতে সন্তানকে সুন্নতে খৎনা করাতে আসেন শিশু আয়হামের বাবা ফখরুল আলম ও মা খায়কুন নাহার চুমকি। রাত আটটার দিকে খৎনা করানোর জন্য অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আর ঘুম ভাঙেনি আহনাফের। এর ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালটির পক্ষ থেকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ছেলে খুব উৎফুল্লভাবে ওটিতে ঢুকেছিল, আর ফিরে এলো না

স্বজনদের অভিযোগ, লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার কথা থাকলেও ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয় আহনাফকে। যে কারণে তার জ্ঞান ফেরেনি।

এ ঘটনায় শিশুর বাবা মোহাম্মদ ফখরুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে আহনাফ সুন্নতে খৎনা করানোর জন্য তার বাবা ফখরুল আলম হাতিরঝিল থানা এলাকার জেএস হাসপাতালের চিকিৎসক এস এম মুক্তাদিরের কাছে নিয়ে যান। তিনি ওইসময় কিছু টেষ্ট লিখে দেন। ওই হাসপাতালেই টেস্টগুলো করে ছেলেকে নিয়ে বাসায় চলে যান। রাতে চিকিৎসক ফোন করে জানান— রিপোর্টগুলো ভাল আছে। সুন্নতে খৎনা করতে কোনো সমস্যা নেই। 

পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ৮টায় ছেলের সুন্নতে খৎনা করানোর জন্য স্ত্রী খায়রুন নাহারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি হাসপাতালে যান। পরে ছেলেকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। আসামিরা জানান— তাদের ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগবে। তখন আহনাফের পিতামাতা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পর ওটি রুমের দরজায় নক করলে তারা জানায়— আরো কিছুক্ষণ সময় লাগবে। এভাবে এক ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর আহনাফের পিতা ফখরুল ওটি রুমে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে নিষেধ করে এবং আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলে।

dhakapost

পরবর্তীতে সন্দেহ হলে ফখরুল জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করেন। সেখানে দেখতে পান— তার ছেলে অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তার বুকে হাত দিয়ে চাপাচাপি করছে এবং নাকে ও মুখে নল দিয়ে রক্ত বের হওয়া অবস্থায় দেখেন। তখন চিকিৎসক এস এম মুক্তাদিরকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সঠিক উত্তর দেননি। ছেলের এই অবস্থা দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে তারা কর্ণপাত না করে নিজেরাই ছেলের দেহে বুকে চাপাচাপি, হাত-পা মালিশ করতে থাকে। তখন জোর করে তাকে (বাবা ফখরুল আলম) ওটি রুম থেকে বের করে দেয়। দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও তারা ছেলের বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরবর্তীতে জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে ফখরুল জানতে পারেন— তার ছেলে আহনাফ মারা গেছেন।

24