বাংলাদেশ

পীরগাছা দুই স্টেশনের কার্যক্রম ১৫ বছর ধরে বন্ধ , রেলপথ এখন গোচারণ ভূমি

রবিউল আলম বিপ্লব,পীরগাছা   রংপুর

২৭ জানুয়ারী ২০২৪


| ছবি: প্রতিনিধি

ট্রেন নিয়মিত থামে। যাত্রীরাও উঠানামা করে। কিন্তু স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ঝুলছে তালা। নেই স্টেশন মাস্টারসহ কোনো জনবল। ফলে দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় স্টেশন দুটি এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ছয়টি ট্রেন যাত্রাবিরতি করলেও যাত্রীদের টিকিট কাটতে হয় না। এমনই দুটি রেলস্টেশন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর ও দেবী চৌধুরাণী।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জনবল সংকটের কারণে প্রায় ১৫ বছর আগে লালমনিরহাট-সান্তাহার রেলপথের স্টেশন দুটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। স্টেশন বন্ধ থাকলেও প্রতিদিন ওই রেলপথে ১৪টি ট্রেন যাতায়াত করছে। এর মধ্যে ছয়টি ট্রেন নিয়মিত থামে। গড়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক যাত্রী উঠানামা করে। কিন্তু টিকিট বিক্রির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কেউই টিকিট কাটে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দেবী চৌধুরাণী ও অন্নদানগর স্টেশনের জরাজীর্ণ ভবনে তালা ঝুলছে। টিকিট কাটার ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠছে। শুধু টিকিট নয়, বুকিং ছাড়াই মালপত্র পরিবহন করা হচ্ছে। জনবল না থাকায় স্টেশনের সবখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। রেললাইন ঘেঁষে গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে অফিস সূত্রে জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে লালমনিরহাট-সান্তাহার রেলপথে বেশ কিছু স্টেশনের মতো রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর ও দেবী চৌধুরাণী স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে স্টেশন দুটিতে নিয়মিত ছয়টি ট্রেন থামছে। প্রতিটি স্টেশনে স্টেশন মাস্টার, সহকারী স্টেশন মাস্টার, গার্ড ও অন্য লোকবলসহ মোট ১৫-১৬ জন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এত জনবল না থাকায় একের পর এক স্টেশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এর আগে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ের (জি.আই.বি.আর) সাধারণ পরিদর্শক রমজান আলীর এই রুটে যাওয়ার খবরে কয়েক হাজার মানুষ রেলপথ অবরোধ করেন। এ সময় তারা বন্ধ স্টেশন চালুর দাবি জানান। পরে জনতার দাবির প্রেক্ষিতে স্টেশন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন রমজান আলী। এর দীর্ঘদিন পরেও স্টেশন দুটি চালু হয়নি।
তবে করোনা শুরুর আগে ২০১৮ সালে স্টেশন দুটিতে টিকেট বিক্রির জন্য লোক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু করোনা কালে সেই কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।
অন্নদানগর স্টেশন এলাকার মতিয়ার রহমান বলেন, ট্রেন এলে কিছু যাত্রী আসে। অন্য সময় লোকজনের ভিড় না থাকায় মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়।
আমেনা বেগম নামের এক যাত্রী বলেন, স্টেশনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও ট্রেনের দেখা মেলে না। রেলওয়ের কোনো কর্মচারী না থাকায় যাত্রীরা ট্রেনের আসা-যাওয়ার সময় জানতে ও মালামাল বুকিং দিতে পারে না। 
অন্নদানগর এলাকার বাসিন্দা ছালাম মিয়া বলেন, স্টেশনটি বন্ধ থাকায় গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেখার কেউ না থাকায় স্টেশন এলাকায় যত্রতত্র গরু-ছাগল বেঁধে রাখা হয়। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
দেবী চৌধুরাণী স্টেশন এলাকার মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূত বীরাঙ্গনা দেবী চৌধুরাণীর নামানুসারে স্টেশনটির নামকরণ করা হয়। ঐতিহ্যবাহী স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী হতাশ হয়ে পড়েছে। দ্রুত স্টেশনটি কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
তাজুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, দুই পাশের স্টেশন বন্ধ থাকায় পীরগাছা স্টেশনে ক্রসিংয়ের সময় ট্রেন দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা।
পীরগাছা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার জেনারুল ইসলাম বলেন, অন্নদানগর ও দেবী চৌধুরাণী স্টেশন বন্ধ থাকায় পীরগাছা স্টেশনে চাপ বেড়েছে। মাঝেমাঝেই এখানে একটি ট্রেন দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে অন্য ট্রেন পার (ক্রসিং) করে দিতে হয়। এতে নিয়মিত শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। 
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম বলেন, লোকবল না থাকায় স্টেশনগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলে আবার চালু করা হবে স্টেশনগুলো।

28