বাংলাদেশ

জমে ওঠেছে ধানচারার হাট, দালালের খপ্পড়ে ক্রেতা-বিক্রেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক   গাইবান্ধা

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪


| ছবি: 

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে তীব্র শীতেও বসে নেই কৃষকরা। স্বপ্নের ফসল ফলাতে ইতোমধ্যে মাঠজুড়ে শুরু হয়েছে বোরো চারা রোপণের কাজ। এরই মধ্যে জমে ওঠেছে ধানচারা কেনা-বেচার হাট। অনেক কৃষক হাটে গিয়ে বিক্রি করছেন চারা। আবার কেউ কেউ চারা সংকটে ছুটছে এইসব হাটে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে একটি দালাল চক্র। তারা ক্রেতা-বিক্রেতাকে ফাঁদে ফেলে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা। এদের খপ্পড়ে পড়ে ঠকছেন হাটে আসা কৃষক।       
সরেজমিনে সাদুল্লাপুর উপজেলার, নলডাঙ্গা, ধাপেরহাট, মীরপুর সাদুল্লাপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, বোরো ধানচারা ক্রয়-বিক্রয়ের চিত্র। এসময় বেশ কিছু দালাল কৃষকদের চারা কেনা-বেচা করে দেওয়ার নামে পকেটস্থ করছে টাকা। এসব দালালের উৎপাতে চরম বিপাকে পড়ছে চারা ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাদের অভিযোগ হাটে আসা মাত্রই ধমক দিয়ে ধানের চারা কেনা-বেচার দায়িত্ব নেওয়ার নামে টাকা গ্রহণ করেছে একদল দালাল। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, এবছর তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় সাদুল্লাপুর উপজেলার বেশ কিছু বোরো বীজ তলা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে চারা সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। হাটে ধানের চারা পাওয়া গেলেও তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন বার্গাচাষিরা। তাদের নিজস্ব জমি না থাকায় অন্যের জমি বর্গা (আদি) নিয়েছেন। এর আগে বীজতলা করতে না পাড়ায় তাদের একমাত্র ভরসা হাটের চারা। ফলে অধিক দামে চারা কিনে চরম হিমসিম খাচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টোল। দেখা গেছে, কৃষকরা রিকশাভ্যান ও বাইসাকেল যোগে বস্তাভর্তি করে  ধানের চারা এনে ওইসব হাটে বিক্রি করেছেন। আর ক্রেতারা মান যাচাই ও জাত নির্ণয়ে চাহিদা মতো চারা কিনছেন। রীতিমত সেখান থেকে চাষিরা চারা কিনে নিয়ে জমিতে রোপণ করছেন। 
 
চারা বিক্রেতা অনু মিয়া বলেন, আমার জমির বীজতলায় চারা উৎপাদন করা হয়। নিজের জমিতে চারা লাগানো হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত ৬ পোন চারা হাটে বিক্রি করলাম। এই চারা বিক্রির জন্য দালালকে টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়া প্রতিপোন চারা বিক্রি বাবদ ২০ টাকা হারে ইজারাদারকেও দিতে হয়েছে। চারা কিনতে আসা চান মহন জানান, এ বছরে আড়াই বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন। এরই মধ্যে শীতের কারণে তার বীজতলার ৪০ ভাগ চারা নষ্ট হয়েছে। এর ফলে চারা সংকটের কারণে হাইব্রিড জাতের ১ পোন চারা (২০ গোন্ডা) ৫৫০ টাকা ও দেশিয় চিকন জাতের চারা ৪৫০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। এভাবে ৪ পোন চারা ক্রয় করেছেন এই কৃষক। এক্ষেত্রে ইজারাদার ও দালালকে টাকা দিতে হয়েছে।  

নিজের জমি না থাকায় প্রতিবেশী এক ব্যক্তির দেড় বিঘা জমি আদি নিয়েছেন বলে জানান বর্গাচষি জহির উদ্দিন ব্যাপারী। সেই জমিতে রোপন করতে ২ হাজার টাকা দিয়ে চারা কিনেছেন। এভাবে চড়া দামে চারা-ডিজেল-সার-কিটনাশক কিনে আবাদ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। এছাড়া চারা কেনার সময় দালালের খপ্পড়ে পড়ে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়েছে তার।  সম্প্রতি হাটে প্রচুর পরিমান চারা কেনা-বেচা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইজারাদারা। তারা বলেছেন, পোন প্রতি খাজনা ২০ টাকা করে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে। এই হাটে কোন প্রকার দালাল নেই। সাদুল্লাপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহাবুব আলম বসনিয়া জানান, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ১১ টি উপজেলায়  ১৪ হাজার ৪০৮ হেক্টর,হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৪৫ ভাগ। তবে ধানচারার কোন সংকট নেই।

27