বাংলাদেশ

জেগে উঠছে দেড়শো বছরের বিলুপ্তপ্রায় ঘোড়ার গাড়ি

সোহানুজ্জামান সোহান, ঘোড়াঘাট   দিনাজপুর

০৩ জুন ২০২৪


| ছবি: প্রতিনিধিঃ

ইট আর পাথরের যুগে যান্ত্রিক বাহনের দৌরাত্ম্যে বিলুপ্তির পথে দেড়শো বছরের ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ি। কিন্তু কৃষি পণ্য পরিবহনে বিলুপ্তপ্রায় সেই ঘোড়ার গাড়ি আবারো জেগে উঠছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে।

একটা সময় ঘোড়ার গাড়ি ছিলো রাজকীয় ঐতিহ্যের অংশ। রূপকথা ও উপকথায়ও আছে এই ঘোড়ার গাড়ির কথা। তার চেয়ে বেশি আছে অবশ্য ঘোড়ার গল্প। পঙ্খিরাজ ঘোড়া। রাজপুত্রের টগবগিয়ে চলা তেজি ঘোড়া। ঘোড়ার গাড়ি অনেক জায়গায় টমটম নামেও পরিচিত। ঘোড়ার গাড়ির যখন প্রচলন হয় তখন ভারতবর্ষে চলে ইংরেজ শাসন। সর্বপ্রথম ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার ইংরেজরা শুরু করলেও স্থানীয় অভিজাত শ্রেণির মানুষও এই সুবিধা নেয়। একসময় তা চলে আসে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ দেশে ঐতিহ্য বেয়ে ১৫০ বছরেরও বেশি সময় পার করেছে রাজকীয় বাহন ঘোড়ার গাড়ি। যাত্রী পরিবহন ছাড়াও টমটম ব্যবহৃত হয় বিয়ে, পূজা, বিভিন্ন দিবসের শোভাযাত্রায়। এসব কাজে টমটমকে ফুল দিয়ে সুসজ্জিত করা হতো। কোচোয়ান ও হেলপারের জন্যও ওইসব অনুষ্ঠানের সময় ছিলো বিশেষ পোশাক। বিশেষ করে বিয়েতে ঘোড়ার গাড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বিয়ে উপলক্ষে ঘোড়ার গাড়িগুলো রঙিন করে সাজানো হতো। ফুলের মালা দিয়ে আর রঙিন কাগজ কেটে নকশা বানিয়ে সাজানো হতো ঘোড়া আর গাড়ি দুটোকেই। অনেকেই পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত ঘোড়ার গাড়ির গাড়োয়ানি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যদিও কালের বিবর্তনে ঘোড়ার গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে যান্ত্রিক গাড়ি। ইদানিং বিয়ে, পূজা, বিভিন্ন দিবসে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন না থাকলেও পণ্য পরিবহনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে এই ঘোড়ার গাড়ি। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষি জমি থেকে কাদাপানি ভেদ করে যান্ত্রিক বাহনগুলো চলতে পারে না। অথচ ঘোড়ার গাড়ি সেই সব স্থান থেকে অনায়াসে পণ্য বহন করে আনতে সক্ষম। ফলে কৃষিপণ্য বহনে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিলুপ্ত প্রায় ঘোড়ার গাড়ি।

উপজেলার ভর্নাপাড়া, কৃষ্ণরামপুর, জয়রামপুর, শালিকাদহ ও করতোয়া নদীর তীরবর্তী আশপাশের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন এই গাড়ি ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের ভর্নাপাড়া গ্রামের মানিক মিয়া জানান, ঘোড়ার গাড়ি ভাড়ায় কৃষিপণ্য বহন করে জীবিকা নির্বাহ করছি। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ টাকা রোজগার হয়। ঘোড়ার খাবার বাবদ প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন।

ঘোড়ার খাবার ছাড়া বাড়তি তেমন কোনো খরচ না থাকায় রোজগারের বেশির ভাগ অংশই থেকে যায়।

উপজেলার ভেলামারি গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, আমি নিজে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করে বাজারে ধান বিক্রি করতে এসেছি। কেনো ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তা ঘাট ভাঙ্গাচোরা থাকলেও ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে যেকোনো পণ্য পরিবহনে কোনো সমস্যা হয়না। আর চরাঞ্চল থেকে ধান কাটা মাড়াই করে বাড়ি ও বাজার পর্যন্ত আনতে যান্ত্রিক গাড়ির থেকে ঘোড়ার গাড়িই বেশি সুবিধাজনক।

49