বাংলাদেশ

সৌন্দর্য আর সম্ভাবনার চরাঞ্চলের সূর্যমুখী

নিজস্ব প্রতিবেদক   কুড়িগ্রাম

১৮ মার্চ ২০২৪


| ছবি: 

দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিছিয়ে রাখা হয়েছে যেনো বিশাল আকারের হলুদ গালিচা। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারও সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখীর হলুদের আভায় জ¦লজ¦ল করছে পুরো মাঠ। অপূর্ব এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনি ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। এমন হাজারও সূর্যমুখী ফুলের নজরকাড়া রূপের দেখা মিলবে রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের ফলুয়ারচর এলাকার ব্রহ্মপুত্রের তীরে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চরাঞ্চলের পতিত কৃষি জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করছেন কৃষকরা। এ ফুল চাষে উৎপাদন খরচ কম। সম্ভাবনা রয়েছে অধিক লাভের। তাই সূর্যমুখী ফুল চাষে ঝুঁকছেন তারা। এ ফুলের তেল অনেক উপকারী স্বাস্থের জন্য। জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ সহজে করা যায়। এ কারণে সূর্যমুখী চাষে বেশি উৎসাহি হয়ে উঠেছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।
কথা হয় বন্দবেড় ইউনিয়নের কুটিরচর খানপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছর ৩০ শতাংশ পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে অধিক অধিক লাভবান হন। তাই এ বছরেও কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে বীজ ও সার এনে তিন বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেন তিনি। এতে তার ব্যয় হয় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তিন বিঘা জমিতে পাবেন ৪৫ মণ বীজ। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ বীজের দাম ৮ হাজার টাকা। এই হিসেবে খরচ বাদে লাভ হবে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী বছরেও চাষ করবেন সূর্যমুখী ফুল।

খানপাড়া এলাকার কৃষক সৈয়নুদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনের বলেন, তাঁরা দু’জনে মিলে এক বিঘা পতিত জমিতে চার করেছেন সূর্যমুখী ফুলের। তাদের জমিটি রাস্তার ধারে হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে বেশি ভিড় করে ওই জমিতে। ফুল ধরে ছবি উঠেন তাঁরা। সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত এখন বিনোদনের কেন্দ্র। ওহেদ নগর এলাকা থেকে সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসেন ফজর আলী। তিনি বলেন, এ উপজেলায় বিনোদনের কোনো কেন্দ্র না থাকায় ফলুয়ারচর, কুটিরচর এলাকায় সূর্যমুখী ফুল দেখতে এসেছেন তিনি। প্রতিবছর এ ফুলের চাষ করা হলে বিনোদনের প্রাণ কেন্দ্র হবে এ অঞ্চল।

আরেক প্রকৃতিপ্রেমী সুমন মিয়া। বাউশমারী এলাকা থেকে ফুল খেতে এসেছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, বিকেল হলেই প্রায় দিনেই ছুটে আসেন সূর্যমুখী ফুল দেখতে। এতে চরাঞ্চলে মাঠের সৌন্দর্য বেড়ে যাওয়ায় অনেক বন্ধু-বান্ধবী ও বড় ভাইয়েরা দেখতে আসেন ফুল। বিভিন্ন স্টাইলে ছবি উঠেন সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে। 
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরীর ভাষ্য, এ বছর উপজেলার ১০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী ফুল। এ ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রোগের প্রতিষোধক হিসেবেও কাজ করে এ তেল। ডাকে সাড়া দিয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন চরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা। এতে কম খরচে অধিক লাভেরও সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। আগামী মৌসুমে আরও বেশি সূর্যমুখী ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষকদের বীজ ও সার সহায়তার পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধি পেতে সব ধরণের সহযোগিতা করবেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

17