বাংলাদেশ

১২ পদের টকে রংপুরে মিলছে ভারতের বিখ্যাত পানিপুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক   রংপুর

০৩ মে ২০২৪


| ছবি: 

বেশ সাজানো গুছানো দুটি ভ্যানে নানা রঙ্গের হাড়িতে হরেক রকমের টক সাজিয়ে রংপুরে বিক্রি হচ্ছে ভারতের বিখ্যাত পানিপুরি। বর্তমানের উর্দ্ধগতির বাজারে খরচের সব ব্যয় মিটিয়েও মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করছেন বিক্রেতা আনিছ ও রুবেল মিয়া। শুক্রবার বিকেলে রংপুর নগরীর লালবাগ রেলগেট এলাকায় দুটি ভ্যানের দেখা মিলবে। আর সেখানেই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্রি হয় পানিপুরি। আর এই পানিপুরির স্বাদ নিতে দূরদুরান্ত থেকে আসছেন ভোজন রসিকরা।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে নগরীর খামার মোড় এলাকার আনিছ ও রুবেল নামে দুই বন্ধু মিলে শুরু করেন পানিপুরির ব্যবসা। শুরুতে ফুসকা ও চটপটির ব্যবসা থেকেই অল্প পরিসরে শুরু করা পানিপুরিতে এখন সফল তারা। যদিও মাস ছয়েক আগে দোকান নিয়ে একাই ব্যবসা করছেন আনিছ মিয়া। তার পাশেই ব্যবসা করছেন রুবেলও। সকালের বাণীর নিজস্ব প্রতিবেদক একেএম সুমনের সাথে আলাপকালে পানিপুরি বিক্রেতা আনিছ ও রুবেল মিয়া এসব তথ্য জানান। ব্যবসা নিয়ে আনিছ মিয়া বলেন, ভাঙ্গাচুরা একটা ভ্যান ছিল আগের যেটাতে আমরা কারমাইকেল কলেজে চটপটি ও ফুসকা বিক্রি করতাম। আমার এক বন্ধু ভারতের কলকাতায় গিয়ে এই পানিপুরি খেয়েছিলো। সে এসে প্রথম পরামর্শ দেয় এটা টেস্ট করার। তারপর আমরা দুই বন্ধু মিলে পরামর্শ করি। বিভিন্ন জায়গায় এটা বানানোর রেসিপি নিয়ে ঘাটাঘাটি করে ফেব্রুয়ারী মাসে প্রথম শুরু করি পানিপুরির বিক্রি। 
তিনি বলেন, প্রথম মাসেই আমরা ভালোই আয় করি। কিন্তু ৫০ টাকা একটু বেশি হয়ে যায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। যেহেতু আমার এখানে শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষেতে আসে তাই পরিমানে কিছুটা কমায় অল্প দামে বিক্রি শুরু করলাম। এখন আমাদের বিক্রি প্রতিদিন কমপক্ষে ৬/৭ হাজার টাকা হয়। আনুসাঙ্গিক খরচ বাদে ২হাজার থেকে ২হাজার ৫শ টাকা আয় থাকছে। 
আরেক পানিপুরি বিক্রেতা রুবেল জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ হাজারের মত খরচ হয়েছে আমাদের। ইনশাআল্লাহ এখন মানুষ দূর-দুরান্তর থেকে পানিপুরি ক্ষেতে আসছেন।  অল্প দামে তাদের খাওয়াতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে। তবে দিনদিন জিনিসপাতির দাম যেভাবে বাড়ছে আমাদের খরচ বেড়েছে প্রায় ১৫ পদের টক বানাতে হয়। সব মিলে নতুন ব্যবসা হিসেবে ভালোই চলছে। ভালো জায়গা হলে পানিপুরির ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে।

মুখরোচক এখাবারের সাথে দেয়া হয় তেতুল টক, পুদিনা পাতা টক, ধনিয়া টক, লেমন টক, খাট্টা টক, বারো মসলা টক, দই টক, ঝাল টক, নাগা টক, জলপাই টক। এছাড়াও প্রায় ১৩ প্রকার টক দিয়ে অল্প দামে পানিপুরি স্বাদ নিতে পেরে খুশি খেতে আসা ক্রেতারা। ছুটির দিনে পানিপুরি ক্ষেতে আসা কারমাইকেল কলেজের মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী সোনিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, এর আগে তো পানিপুরি এখানে ছিল না। এখন এখানে পানিপুরি খেতে পাচ্ছি ভালো লাগছে। যেহেতু বিভিন্ন টক দিয়ে এই পানিপুরি পাওয়া যায় তাই প্রায়ই খেতে আসছি বন্ধু বান্ধবী মিলে। অল্প দামে নানান টক দিয়ে মুখরাচক খাবার হিসেবে ভালোই লাগে।

ঋধি নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, পানিপুরি বিষয়টি রংপুরে ব্যতিক্রম। কারণ আমরা এর আগে সাধারণত ফুসকাই খেতাম। ফুচকাতে শুধু একটা টক থাকতো কিন্তু এই পানিপুরিতে প্রায় ৭-৮ ধরনের টক দিয়ে দিচ্ছে। মুখরোচক খাবার হিসেবে ভালোই লাগছে সাথে টকটাও পেয়ে যাচ্ছি বিভিন্ন স্বাদের। পানিপুরি খেতে আসা ষাটোর্ধ্ব ওয়ালিউর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মেসে ছেলেকে রেখে শখে পানিপুরি খেতে আসছি। অনেক শুনেছি পানিপুরি রংপুরে পাওয়া যাবে ভাবতে পারিনি। খেতে অনেকটা ফুচকার মতই তবে এটাতে কয়েক ধরনের টক দেয়া। কিন্তু ফুচকার টক পাতলা আর এটার টকগুলো গাঢ়। ভালোই লাগলো দামও কম।
প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত পাওয়া যায় এই পানিপুরি। পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও নগরীর লালবাগে পানিপুরির স্বাদ নিতে আসছে নানা বয়সি মানুষ।

32