বাংলাদেশ

গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে যুক্ত হচ্ছে আইসিইউ

শাকিল আহম্মেদ, ফুলছড়ি   গাইবান্ধা

১৭ মে ২০২৪


| ছবি: প্রতিনিধিঃ

উত্তরের জেলা গাইবান্ধার বিশাল জনগোষ্ঠীর  চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ কেবল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল। আধুনিক যন্ত্রপাতি, জনবল ও শয্যা সংকট, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই হাসপাতাল। জেলার দূর-দূরান্ত থেকে রোগী ও রোগীর স্বজনদের চিকিৎসা নিতে এসে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগের শিকার হন মুমূর্ষু রোগী ও তাদের স্বজনেরা। অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতা, মশা-মাছির উপদ্রব, দুর্গন্ধ, ময়লা বেডেই থাকতে হয় অসুস্থ রোগী ও স্বজনদের। হাসপাতালে দূর্ভোগের চেয়েও যেন মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। অসহায়, হত-দরিদ্র, গরীব ও সাধারণ মানুষের বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার সামর্থ্য না থাকায় তাদের চিকিৎসার শেষ ভরসা জেলা সদর হাসপাতাল।



সেইসাথে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য নেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সুবিধা। রংপুর কিংবা বগুড়া নিয়ে যাওয়ার পথেই বিনা চিকিৎসায় প্রতি বছর মারা যাচ্ছে শত শত মুমূর্ষু রোগী ।‌

জেলার চিকিৎসা সেবার এমন বেহাল দশা গত কয়েক দশক ধরে চলতে থাকলেও সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি দায়িত্বশীল কেউই। তবে গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি- সাঘাটা) আসনের সংসদ সদস্য মাহামুদ হাসান রিপনের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে গাইবান্ধাবাসীর।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদের এক অধিবেশনে জেলার স্বাস্থ্য সেবার বেহাল চিত্র তুলে সংসদ সদস্য রিপন বলেন, দুঃখ জনক হলেও সত্যি যে রংপুর বিভাগের ৮ টি জেলার মধ্যে শুধু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট থাকলেও গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে নেই আইসিইউ সুবিধা।

গাইবান্ধা জেলা হাসপাতাল থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুরত্ব প্রায় ৭৭ কিলোমিটার আর বগুড়ার দুরত্ব প্রায় ৬৬ কিলোমিটার।

গাইবান্ধা থেকে একজন রোগীকে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে তাই রংপুর ও বগুড়া যেতে হয়। দীর্ঘ পথে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার আগেই অনেক রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টকর ও মানবেতর।

সংসদ সদস্যের এমন আবেদনের প্রেক্ষিতে, বিষয়টি আমলে নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ১৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব আরাফাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাইবান্ধা -০৫ আসনে সংসদ সদস্য মাহামুদ হাসান রিপনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে গাইবান্ধা জেলায় বসবাসরত মানুষের চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে একটি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট( আইসিইউ) নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে আইসিইউ নির্মাণের খবরে উচ্ছ্বাসিত গাইবান্ধা জেলাবাসী সংসদ সদস্য মাহামুদ হাসান রিপনের প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। 


স্থানীয়রা বলেন, আগে আমাদের আত্মীয়-স্বজন বেশি অসুস্থ হলে আইসিইউ এ ভর্তি করানোর জন্য রংপুর অথবা বগুড়া নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতো। অনেকসময় দেখা যায় দুরত্ব, হাসাপাতাল গুলোর অব্যবস্থাপনা  ও নানা জটিলতার কারণে আইসিইউতে ভর্তি করানো সম্ভব হয় না। কিন্তু এখন আমাদের নিজের জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ হবে আমাদের কস্ট অনেক কমে যাবে। গাইবান্ধায় অনেক দায়িত্বশীল এর আগেও ছিল এখনো অনেকে আছে কিন্তু গাইবান্ধাবাসীর কথা কেউ চিন্তা করেন না। ফুলছড়ি-সাঘাটার এমপি পুরো গাইবান্ধাবাসীর কথা চিন্তা করে জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থার জন্য সংসদে দাবী জানিয়েছেন। তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ তিনি সবসময় গাইবান্ধাবাসীর হৃদয়ে থাকবে। সেইসাথে জেলা সদর হাসপাতালের শয্যা উন্নতিকরণ, জনবল নিয়োগ, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাহমুদ হাসান রিপনকে অনুরোধ জানান স্থানীয়রা।

নিরাপদ চিকিৎসা চাই গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি শেখ রোহিত হাসান রিন্টু বলেন, গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা চালু করার উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। প্রকল্পটি যত দ্রুত বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের মানুষেরা নিরাপদ চিকিৎসা সেবা পাবে । 

ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও উদাখালি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি অনিক হাসান টিটু বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল জেলা সদর হাসপাতালে যেনো আইসিইউ এর ব্যবস্থা করা হয়। তাই ফুলছড়ি-সাঘাটার সংসদ সদস্য  (ম্যাজিক ম্যান) পুরো গাইবান্ধাবাসীর কথা চিন্তা করে সংসদে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রালয় বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের গাইবান্ধাবাসীর এই দাবী মাহমুদ হাসান রিপন (এমপি) মহোদয়ের মাধ্যমেই পূরণ হবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ১০০ শয্যার হাসপাতাল বিল্ডিংয়ে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এতে নিয়মিত রোগী ভর্তি থাকেন ৩ শতাধিক।

বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসেন প্রতিদিন প্রায় ১২০০-১৫০০ মানুষ। পর্যাপ্ত জায়গা না হওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে হাসপাতাল চত্বরে ২০১৮ সালে নতুন ১০ তলা ও ৬ তলা দুটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে ১০ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। 

83