বাংলাদেশ

পঞ্চগড়ে স্থানীয়দের চাকুরীতে নিয়োগ দাবিতে সচতেন সমাজের মানববন্ধন

আবু সালেহ মোঃ রায়হান   পঞ্চগড়

০৬ জুন ২০২৪


| ছবি: প্রতিনিধিঃ

পঞ্চগড়ে জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ের নিয়োগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া উপজেলা থেকে ৮ জন প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছেন। ৬ টি পদে নিয়োগ দেয়া ৩৪ জনের মধ্যে ওই ৮ জন ছাড়াও অন্য জেলা থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৩ জনকে। আর পঞ্চগড় জেলা থেকে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ১৩ জন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২৯ জন নিয়োগের কথা বলা হলেও পরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৪ জনকে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে। আইনজীবীদের কেউ কেউ বলছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে তার এলাকার লোকজনদের এখানে নিয়োগ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে আদালতের নিয়োগে যে শঙ্কা করা হয়েছিল ফলাফল সেরকমই হওয়ায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ট্রলও করছেন। 
পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে গত মার্চে সাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ১ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ২ জন, অফিস সহকারী পদে ৯ জন, গাড়ি চালক পদে ১ জন, জারিকারক পদে ৮ জন, অফিস সহায়ক পদে ৮ জনের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ৩ ও ৪ মে। ২১ মে পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ২৮ মে থেকে ২ জুন যোগদানের সময় নির্ধারণ করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষার আগেই আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপমুক্ত ও পঞ্চগড়ের যোগ্য মেধাবীদের নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন করে আইনজীবীসহ জেলার সচেতন নাগরিকরা। তাদের শঙ্কা ছিলো বরাবরের মতো এবারো আদালতের নিয়োগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার এলাকার লোকজনকে নিয়োগ দেবেন। বঞ্চিত হবে পঞ্চগড়ের শিক্ষিত বেকার তরুণরা। 
পরে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায় আইনমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা ও আখাউড়া উপজেলা থেকে নিয়োগ পেয়েছেন ৮ জন। দিনাজপুর থেকে ৩ জন, ঠাকুরগাঁও থেকে ৩ জন, রাজশাহী থেকে ২ জন ও কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, রংপুর থেকে নিয়োগ পেয়েছেন ১ জন করে। পঞ্চগড় জেলা থেকে নিয়োগ পেয়েছেন ১৩ জন। এছাড়া ২৯ জন নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৪ জনকে। অফিস সহকারী পদে ৯ জনের বদলে ১২ জন ও অফিস সহায়ক পদে ৮ জনের  বদলে ১০ জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। 
আইনমন্ত্রীর এলাকা থেকে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা হলেন অফিস সহকারী পদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার রাধানগর কলেজপাড়া এলাকার দিদারুল ইসলাম, কসবা উপজেলার তালতলা এলাকার আরিফুল ইসলাম শান্ত, কসবা উপজেলার সাহাপাড়া এলাকার ধ্রুব দত্ত, জারিকারক পদে কসবা উপজেলার মইনপুর গোবিন্দপুর এলাকার মহিন উদ্দিন মিয়া, কসবার তেতৈয়া এলাকার আব্দুল কাদির, অফিস সহায়ক পদে আখাউড়া উপজেলার মসজিদপাড়া রজব আলী। কসবা উপজেলার নেমতাবাদ ভরা জাঙ্গাল এলাকার নিবাস চন্দ্র দাস, কসবা উপজেলার বিষ্ণাউড়ী ধজনগর এলাকার মোহাম্মদ আল আমিন। 
জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে নিয়োগে আইনমন্ত্রীর এলাকার লোকজনসহ অন্য জেলার লোকজন বেশি নিয়োগ পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে একজন আবু বকর সিদ্দিক। তিনি জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সিনিয়ন আইনজীবী। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে নিয়োগে আইনমন্ত্রী হস্তক্ষেপ বন্ধ করা ও পঞ্চগড়ের বেকার তরুণদের নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত ২৩ এপ্রিল আদালত চত্বরে সচেতন আইনজীবীবৃন্দ ও সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন করে একই দাবি জানান তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। তিনি যেমনটি আশঙ্কা করেছিলেন নিয়োগে তাই হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। 
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে এর আগে চারটি নিয়োগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার এলাকার লোকজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। বরাবরই বঞ্চিত হয়েছে পঞ্চগড়ে কৃষক শ্রমিকের ছেলেমেয়েরা। এবারো হাজার হাজার টাকা খরচ করে নিয়োগের আবেদন করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন নিয়োগ পেলেও বেশিরভাগ নিয়োগ পেয়েছেন আইনমন্ত্রীর এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ অন্য এলাকার মানুষ। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এবারো বঞ্চিত করা হয়েছে পঞ্চগড়ের মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের সন্তানদের। গত কয়েক বছর ধরে এই অনিয়ম বন্ধ করার দাবিতে আমরা আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু এবারো আইনমন্ত্রী ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার এলাকার লোকজনদের নিয়োগ দিয়েছেন। নামমাত্র নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিয়োগ কমিটিতে যারা রয়েছেন তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। পঞ্চগড়ে তেমন কোন ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। তাই বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। সব দিকেই আমরা পিছিয়ে রয়েছি। তাই এসব অনিয়ম বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।  
জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ের নিয়োগ কমিটির একাধিক সদস্যের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হয় নি। 

13