বাংলাদেশ

পীরগঞ্জে জ্যোতিডাঙ্গা বিল নিয়ে ফের উত্তেজনা

প্রতিনিধি পীরগঞ্জ   রংপুর

০৪ মে ২০২৪


| ছবি: 

জলমহাল নিয়ে বিরোধ, সংঘর্ষ, আঞ্চলিক দাঙ্গা ও হামলা মামলা এই শব্দগুলোর সাথে সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপজেলার পাঁঁচগাছী ইউনিয়নের জ্যোতিডাঙ্গা বিল পাড়ের মানুষ। বিগত এক দশকে ওই বিল ইজারাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে মারামারিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের জ্যোতিডাঙ্গা বিলের ইজারা প্রদানকে ইস্যু করে ফের উত্তেজনা বিরাজ করছে। বর্তমান জলামহল ইজারা নিয়ে কেশবপুর মৎস্যজীবী সমিতি ও পাঁচগাছী মৎস্যজীবী সমিতির জলমহালের ইজারা নিয়ে দুই গ্রুপের টানাটানিতে যে কোন সময় রুপ নিতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের। যা এলাকার কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জানা যায় , জ্যোতিডাঙ্গা বিলটি কেশবপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর অনুকূলে ১৪২৮-১৪৩০ বাংলা সন মেয়াদে উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় ইজারা প্রদান করছেন ভূমি মন্ত্রণালয়। কেশবপুর মৎস্যজীবী সমিতি ১৩৯৫ বাংলা সন থেকে সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে সরকারী বিধি মোতাবেক জলমহল ইজারাদার হিসেবে ভোগ দখল করে আসছে। মাঝে দুই মেয়াদে স্থানীয় এনজিও সমকাল ও রিংকু জলামহল নিলেও কেশবপুরের মৎস্যজীবীদের সাথে গ্রামবাসীরা জোটবদ্ধ হয়ে তাদের রুখে দেয়। এ নিয়ে হামলা মামলার ঘটানাও ঘটে।   
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে ১৬ একর ৩৪ শতাংশে জ্যোতিডাঙ্গার বিলে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার খনন কাজ চলায় স্থানীয় স্বার্থন্বেসী মহলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ওই বিলে। বিলটি ইজারা নেওয়ার জন্য এবারে নতুন করে পাশ^বর্তী পাঁচগাছী মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা দরপত্র দাখিল করায় এই উত্তেজনা দেখা দেয়। জলামহাল ইজারাপ্রাপ্তির জন্য দুই সংগঠনের সদস্যরা স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের প্রভাবে জলামহল ইজারা নিতে মরিয়া হয়ে পড়েছে মৎস্যজীবী সমিতি সংশ্লিষ্টরা। এতে কেশবপুর গ্রামের জ্যোতিডাঙ্গা বিলকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক দাঙ্গা শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। 
বিলটি কেশবপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ-এর সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্নয়ন স্কীমের আওতায় আসার পর প্রভাবশালীদের শকুনের চোখ পড়েছে তাই প্রভাবশালী চক্রের প্রভাবে জলমাহল ইজারা নিয়ে দেখা দিয়েছে দুই সংগঠনের রশি টানাটানি। আশঙ্কা প্রকাশ করে কেশবপুর মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি সায়েদুল ইসলাম বলেন, আমি সরকারের ঘরে টাকা দিয়ে বিলটি দীর্ঘদিন থেকে বিলের তীরবর্তী গ্রামের মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা ইজারা নিয়ে দেখভাল করে আসছি। 
এ বছর সরকার বিল খনন কাজ শুরু থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের ইন্ধনে অপর মৎস্য ব্যাবসায়ীদের সমিতির লোকদের সাথে যোগ সাজোশ করে মৎস্যজীবীদের বিভক্ত করে এক ইউনিয়নেই দুই মৎস্যজীবী সংগঠন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিনিয়ত প্রভাবশালীরা হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে। স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট খামারিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে জলমহালটিকে প্রকৃত অর্থে যাদের প্রাপ্য তাদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ করেন তিনি। স্থানীয় শাহীন আলম বলেন, জ্যোতিডাঙ্গা জলমহলটি দীর্ঘদিন ধরে কেশবপুর গ্রামের স্থানীয় মৎস্যজীবীরা সরকারকে রাজস্ব দিয়েই ভোগ দখল কওে আসছে। এই জলমহাল নিয়ে এ বছর খনন করায় স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু মৎস্য ব্যবসায়ীদের কু পরামর্শে পাঁচগাছী ইউনিয়ন মৎস্যজীবীদের দিয়ে জলমহল ইজারা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এবার এই জলমহাল নিয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ইউনিয়ন জুড়েই। যেকোনো সময় বড়ধরনে দাঙ্গা সৃষ্টি হতে পারে। এতে এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এই সচেতন নাগরিক। 
এদিকে বিল ইজারার বিষয়টি মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া। বাবলু মিয়া বলেন, জলমহাল ইজারা নেওয়ার বা দেওয়ার বিষয়ে আমরা কিছুই নই, ইজারা নেওয়ার জন্য দুই মৎস্যজীবী সংগঠন দরপত্র ফেলেছে। জলমহল ইজারাদার কমিটি নিয়ম অনুযায়ী বিলটি ইজারা দিবেন। আমি বা আমার পরিষদ এ বিলের ইজারার ব্যাপারে কিছুই করার ইখতিয়ার রাখিনা। দরপত্র দাখিলকারী দুই মৎস্যজীবী সংগঠন ও ইজার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিস্পত্তি করবেন। 
এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান প্রকৃত মৎস্যজীবীরাই বিলের ইজারা পাওয়ার হকদার। তিনি আরও বলেন সরকারের রাজস্ব আয়ের ব্যাপারটি বিচার্যের বিষয়।  

33