বাংলাদেশ

তিস্তা নদী শুকিয়ে ঝুঁকিতে তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক   রংপুর

০৯ মার্চ ২০২৪


| ছবি: 

তিস্তা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে জেলেদের জীবিকা। উপার্জনের একমাত্র পথ বন্ধ হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তিস্তা নদী প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে, নদীটি শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। আর নদীর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। এসব বালুচর হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষকে। কোথাও ৬ মাইল, আবার কোথাও ৮ মাইল বালুচর পাড়ি দিতে হচ্ছে তাদের। আবার পানি না থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না। ফলে, নৌকা ঘাটগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশ মাঝি । জীবিকার জন্য পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। পানি না থাকায় মিলছে না মাছ, তাই মৎস্যজীবিরাও আছেন সংকটে।
রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার তিস্তাপাড় দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের কৃষক মতিন মিয়া বলেন, 'তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে। মাইলের পর মাইল বালুচর। এই বালুচর দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করছি, অথচ সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।' গংগাচড়া ইউনিয়নের কৃষক শরিফুল বলেন, 'নদীত পানি নাই। পানি না থাকায় তামাক ও ভূট্টায় প্রতি সপ্তাহে পানি দিয়েও দিশা মিলছে না।' লক্ষিটারী ইউনিয়নের মৎস্যজীবীরা বলছেন, তিস্তার ওপর আমাদের জীবিকা। এখন তিস্তা শুকিয়ে গেছে। চারপাশে শুধু বালি আর বালি। যে অল্প অংশে পানি আছে তাতেও মিলছে না মাছ। আমাদের এখন দু-বেলা খাবারের ব্যবস্থাই হচ্ছে না।
আলমবিদিতর ইউনিয়নের  তিস্তাপাড়ে বড়াইবাড়ি গ্রামের জেলে গৌরাঙ্গ  বলেন, 'তিস্তায় পানি নাই,  তাই মাছ নাই । এ কারণে তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল জেলেরা নিজ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। 
কোলকোন্দ ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় নৌকা ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজন পায়ে হেঁটে তিস্তা পাড়ি দিচ্ছেন। নৌকা চলাচল না করায় নৌকা চালানোর কাজে নিয়োজিত মাঝিরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে পরিবার পরিজন নিয়ে   মানবেতর  জীবনযাপন করছে। গংগাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের সিরাজুল( কৃষক )বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষজন গেল কয়েক বছর ধরে শুধু শুনেই আসছেন তিস্তা নদী খননসহ তিস্তাপাড়ের উন্নয়নে সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করছে। আজো এ প্রকল্পের বাস্তব কোন রুপ দেখতে পাচ্ছেন না তিস্তাপাড়ের মানুষ। তিস্তা নদী খনন করে নির্দিষ্ট একটি চ্যানেলে পানি প্রবাহিত করা হলে উপকৃত হবেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। এতে সারা বছরই তিস্তায় পানি প্রবাহ থাকবে। চলাচল করবে নৌকা। নদীতে পাওয়া যাবে মাছ। নদীর বুকে বিপুল পরিমানে জমি হয়ে উঠবে আবাদি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টের উজানে ২০০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। তা দিয়ে কোনো রকমে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে, ব্যারেজের ভাটিতে প্রায় ১০২ কিলোমিটার তিস্তায় ১০০ কিউসেক পানিও সরবরাহ নাই । 

24