বাংলাদেশ

দেবীগঞ্জে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল সংগঠন 'পাখি অভয়াশ্রম সংঘ'

নিজস্ব প্রতিবেদক   পঞ্চগড়

০১ মার্চ ২০২৪


| ছবি: 

বেলা গড়িয়ে বিকেল, এরপর সন্ধ্যা। এই সময়টা নীড়ে ফেরা পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে সরব হয় চারপাশ। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত শহরটি হলো দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের খোড়ার পাড় পন্ডিত মোড় এলাকা । শহরের ভেতরেই সবুজ গাছ গাছালিতে ঘেরা এই সবুজ শ্যামল পরিবেশ। সুন্দরদিঘী ইউনিয়নে প্রতিবারের ন্যায় গাছে মাটির হাড়ি বেধে পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছেন একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "পাখি অভয়াশ্রম সংঘ"। প্রতিদিন এলাকার শত শত দর্শনার্থী আসেন এই পাখি আর প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে। অভয়াশ্রমে পানি- খাবার সরবরাহ করে পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাস্থল গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাদের এই ব্যতিক্রম উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। চারদিকে নগরায়নের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। তাই পাখি রক্ষায় এই ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "পাখি অভয়াশ্রম সংঘ"। উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার তরুণরা মিলে "এসো সুন্দর সমাজ গড়ি, পাখি শিকার বন্ধ করি" স্লোগানে গড়ে তোলেন এই " পাখি অভয়াশ্রম সংঘ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় পাখির নিরাপদ কৃত্রিম আবাস তৈরি, পাখি, প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ, জীব-বৈচিত্র রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এছাড়াও অত্র ইউনিয়নের নাম যেই পুকুরের নাম অনুসারে করা হয় তা হলো ওই ইউনিয়নের সুন্দর দিঘী পুকুর। সেই দিঘীতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ দেশী বিদেশী পাখির মিলনমেলা লক্ষ করার মতো। ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে এ সংগঠনটি। বর্তমানে তাদের সদস্য সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮০ জন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "পাখি অভয়াশ্রম সংঘ" এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাহেব আলী বলেন, আমাদের এ প্রজন্মের শিশু কিশোররা পাখি দেখেনা। গাছের মধ্যে আমরা পাখির আবাস্থল গড়ে তুলতে পারি। তাহলে আমরা অন্তত পাখির ডাক শুনতে পাবো। নতুন প্রজম্মকে পাখিপ্রেম প্রকৃতি প্রেমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেই আমাদের এমন উদ্যোগ। অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলেও আমরা হাল ছাড়িনি, আজ আমরা এ পর্যন্ত এসেছি। আমরা শুধু সুন্দরদিঘী নয়, আমরা পুরো দেবীগঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। শুধু মাত্র পাখি না আমরা সমাজ সেবা মুলক সকল কাজ করতে আগ্রহী আছি এবং থাকবো সাধ্যমত করার চেষ্টা করছি।

সংগঠনের সভাপতি জমসের আলী বলেন, সুন্দরদিঘীর সুন্দর রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।  দুর দুরান্ত থেকে অনেকেই পাখি দেখতে আসছেন এটাই আমাদের সার্থকতা। ‘পাখিদের নিরাপদে আশ্রয় দেয়ার সতর্কতায় পাখি শিকার, বিক্রি ও হত্যা বন্ধে সচেতনতামূলক প্রচার করছি নিয়মিত। সংগঠনটির আরেক সদস্য রুস্তম আলী বলেন, ‘পাখিরা গাছে আশ্রয় নেয়, গাছেই ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে গাছে আশ্রিত পাখির ক্ষতি হয়ে থাকে। নিরাপদ আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাবে প্রকৃতিতে পশু-পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। এসব দিক বিবেচনা করে পাখির জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ কাজটি করেছি আমরা।

পাখি অভয়াশ্রম সংঘের' সাধারন সম্পাদক মাহাবুব ইসলাম বলেন, বড় বড় গাছে মাটির হাঁড়ি বেঁধে দেয়া হয়েছে। মাটির হাঁড়িগুলোর ওপরের অংশ খোলা। এসব হাঁড়িতে বাসা তৈরি করবে পাখিগুলো। সেখানেই ডিম দিবে এবং বাচ্চা ফুটাবে। আমরা সবাই এমন স্বপ্নই দেখছি। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে পাখিরা হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল। এ ছাড়া পাখি প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ ভাবনা থেকেই পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি ও তাদের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করতে সংগঠনটি গাছে গাছে পাখির বাসা হিসেবে মাটির হাঁড়ি বাঁধার প্রতিবছর এ উদ্যাগ।

তাদের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় জেলা পরিষদের সদস্য আক্তার হোসেন নিউটন, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজ ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন সাজু। তাদের এমন উদ্যোগে অন্যান্য পাখি ও প্রকৃতি প্রেমিরাও এগিয়ে আসবে পরিবেশ রক্ষায় বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।  তাই এই পাখিদের রক্ষার জন্য গাছের ডালে ডালে মাটির হাঁড়ি বেঁধে বাসা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

পঞ্চগড় জেলা পরিষদের সদস্য আক্তার হোসেন নিউটন তিনি বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরসীম। তাই মানুষকে পাখি সুরক্ষায় সচেতন করতে হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাখিকে নিরাপদ আবাসস্থল দিতে হবে। বাড়াতে হবে তাদের বংশ বিস্তার। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে দেবীগঞ্জে পাখিদের নিরাপদ বাসা ও বংশ বিস্তার করার  জন্য শুরু হয়েছে গাছে গাছে হাড়ি বাঁধা। যেখানে তারা নির্ভয়ে বসবাস করতে পারবে। পাখি বান্ধব পরিবেশ তৈরী করলে নগরায়নও হবে, পরিবেশও সুন্দর হবে। এর সঙ্গে মানুষ ও পাখির সহাবস্থান নিশ্চিত হবে। সংগঠনের সদস্যরা সুন্দরভাবে পরিবেশের উন্নয়নমূলক কাজগুলো করে থাকে। আমি মনে করি, আমাদের এলাকার সবার উচিত সংগঠনের কাজে সহযোগিতা করা। এখানে অনেক বিরল প্রজাতির পাখি রয়েছে। এমন একটি উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আমি সংগঠনটির সাফল্য কামনা করছি।

সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজ বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকৃতি তার রুপ হারিয়ে ফেলেছে, আমাদের বনায়ন কমেছে, পাখি কমেছে,। তবুও এই সংগঠনটি পাখিদের পরিবেশ ধরে রেখেছে তার জন্য এই সংগঠনটি প্রসংশনীয়। সুন্দরদিঘীর পাখি অভয়াশ্রমটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে সাড়া বাংলাদেশ থেকে পর্যটক আসবে এখানে। স্থানীয় ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাহারুল ইসলাম বলেন, অভয়াশ্রমে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ থাকায় পাখিরা এখানে ছুটে আসে, নিরাপদে থাকতে পারে। পাখির ডাক শোনার জন্য অনেকেই এখানে আসেন। সত্যিই খুব ভালো লাগে। পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ ছাড়াও এই সংগঠনটি কিছু সামাজিক কাজও করছে।

যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাতার হোসেন সাজু বলেন, সুন্দরদিঘী পুকুর একটি ঐতিহাসিক পুকুর। এই পুকুর কে ঘিরেই এই অভয়াশ্রম। অভয়াশ্রম রক্ষায় আমরা সবাই কাজ করবো, পাখিরা যাতে অভয়ে আকাশে উড়তে পারে নিচে নামতে পারে, মানুষকে যেনো বন্ধু মনে করে তার জন্য সকল সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারন মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
 

29