বাংলাদেশ

দিনাজপুরে অস্তিত্ব সংকটে জাতীয় পার্টি 

নিজস্ব প্রতিবেদক   দিনাজপুর

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪


| ছবি: 

টানা ৯ বছরের শাসক দল জাতীয় পার্টি, সাবেক সেনাপ্রধান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের হাত ধরে জন্ম নেয়া দল জাতীয় পার্টি স্বৈরাচারের তকমা পেলেও পরবর্তীতে দেশের রাজনীতিতে তৃতীয় বৃহত্তম ূদল হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।  ৯০ পরবর্তী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে কখনো সরকার কখনো বিরোধী দলের সাথে রাজপথে থেকে সরকার পতনে ভূমিকা রাখেন। ২০০১ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনে বিএনপি জামাতের নেতৃত্বাধীন গঠিত চারদলীয়জোট গঠনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনসমর্থন আদায়ে সভা সমাবেশ করেন।

কিন্তু পরবর্তীতে হঠাৎ আন্দোলনের মাঝপথে জোট থেকে বেরিয়ে যান। এর পর অবশ্য বিএনপির সঙ্গে আর জোট ভিত্তিক আন্দোলনে যাননি। ২০০৬ সালে বিএনপি জামাতের নেতৃত্ব চলমান সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের গঠিত জোটে যোগ দিয়ে বেশ কিছু আসন লাভ করেন। রাগ অনুরাগ,কখনো পক্ষে কখনো হঠাৎ চলে যাওয়ার ঘোষণা এভাবেই রাজনীতির ময়দানে সব সময় আলোচনায় থাকেন জাতীয় পার্টি। এর মাঝেই কখনো রওশন এরশাদ কখনো   বিদিশা এরশাদ, মাঝে মধ্যে মহাসচিব পরিবর্তন সব মিলিয়ে দেশের রাজনীতিতে এক রম্য আলোচনার নাম জাতীয় পার্টি। 

মূলত জন্ম থেকেই জাতীয় পার্টি রংপুর বিভাগ ভিত্তিক তুলনামূলক ভালো করলোও অন্য বিভাগে তেমন প্রভাব ছিলো না। রংপুরের পাশ্ববর্তী জেলা দিনাজপুরে কখনোই জাতীয় পার্টির তেমন আধিপত্য ছিলো না। বিশেষ করে ৯০ পরবর্তী বিভিন্ন নির্বাচনে দিনাজপুরের ১৩ উপজেলার ৬ টি আসনে কখনোই তেমন প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়নি জাতীয় পার্টিকে।

তবে এক সময় ভোটের মাঠে পার্থক্য গড়ে দেয়া এদের তাদের ভোটে অন্যদলকে জিতিয়ে দেয়ার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই। বিশেষ করে ২০০০ সাল পরবর্তী জাতীয় পার্টির নানারকম নাটকীয়তা হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের বিভিন্ন সময়ে মত পরিবর্তনের কারণে দিনাজপুর জেলায় জাতীয় পার্টির অবস্থান ও ভোট ক্রমেই কমতে থাকে। 

সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভোট প্রাপ্তির অবস্থান প্রমাণ করে দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি এখন নাম সর্বস্ব দলে পরিণত হচ্ছে। গত ৭ জানুয়ারি ঘোষিত ফলাফলে দিনাজপুরে জাতীয় পার্টির অবস্থা একবারে নাজুক।

দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহিনুর আলম পেয়েছেন মাত্র ৪৮৬:ভোট,দিনাজপুর-২ (সেতাবগন্জ-বিরল) আসনে মাহবুব আলম পেয়েছেন ৪৮৪৯ ভোট,অথচ এই আসনের বোচাগন্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট জুলফিকার । তিনি বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বড় ভোটের ব্যাবধানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

দিনাজপুর ৩ আসনে জাতীয় পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল মাত্র ৩৬০১ ভোট পান। আহমেদ শফি রুবেল বিগত কয়েকবার কখনো পৌরসভা কখনো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করে সামান্য কিছু ভোট পান।

সদর উপজেলায় আহমেদ শফি রুবেলকে বলা হয় ওয়ান ম্যান শো,অর্থাৎ আর কেউ নেই, সর্বত্র তিনি। দিনাজপুর ৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির মোনাজাত চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ৫৬৩ ভোট,  দিনাজপুর ৫ (পার্বতীপুর- ফুলবাড়ি) আসনে নুরুল ইসলাম পেয়েছেন ৬৫৬৫ ভোট,যা জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বেশি।

দিনাজপুর জেলায় ভোট ভোটার সংখ্যা ২৫ লাখের বেশি সেখানে এবার নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১৬০৬৪ ভোট। এক সময় ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টির মোটামুটি অবস্থান বিশেষ করে তৃতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে হিসাব করা হলেও বর্তমানে জাতীয় পার্টির অবস্থান একবারে নেই বললেও ভুল হবে না। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আজিজুল ইমাম চৌধুরীকে হারিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

তিনি দেশের আলোচিত পর্যটন শিল্প স্বপ্নপুরীর মালিক ও দিনাজ ৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিকের আপন চাচা।মূলত আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার কারনে তিনি অর্থের প্রভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও সেখানে দলীয় কোন প্রভাব ছিলো না। দেলোয়ার হোসেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হলেও দলীয় কোন অনুষ্ঠানে উনার উপস্থিতি নেই বললে চলে।

22