বাংলাদেশ

সৈয়দপুরে শিক্ষার্থীর অপহরণের নাটক গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক   নীলফামারী

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪


| ছবি: প্রতিনিধি

নীলফামারীর সৈয়দপুরে অনলাইন জুয়ায় (থাই জুয়া) আসক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী নিজেকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে প্রবাসী বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হুগলীপাড়ায়। ওই শিক্ষার্থীর নাম হুমায়ুন কবির ওরফে বাবু (২২)। সে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এদিকে, আট দিন পর গত (৩০ জানুয়ারি) সৈয়দপুর থানা পুলিশ অপহরণের সাজানো ঘটনার মূল হোতা হুমায়ুন কবির বাবুকে তাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কর্তৃক এভাবে একটি অপহরণের সাজানো ঘটনার বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈয়দপুর থানা পুলিশ এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। এতে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্লোল কুমার দত্ত সাজানো অপহরণ ঘটনা ও উদ্ধার সম্পর্কে  বিস্তারিত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এ সময় সৈয়দপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহা আলম, অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) এস এম রাসেল পারভেজ উপস্থিত ছিলেন।
 পুলিশের প্রেস বিফ্রিংয়ে জানানো হয়, সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হুগলীপাড়ার তহিদুল ইসলাম ও হামিদা বেগম দম্পতির  দুই মেয়ে এবং এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। হুমায়ুর করিব বাবু সকলের ছোট। প্রায় চার বছর আগে হুমায়ুন কবির বাবু’র বাবার সঙ্গে তাঁর মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। বর্তমানে তাঁর মা হামিদা বেগম প্রায় দুই বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে ঢাকার আশুলিয়া বসবাস করছেনন। আর বাবু’র বাবা তহিদুল ইসলামও দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তিনি এখন কাতার প্রবাসী। তিনি প্রায় ১৫/১৬ বছর যাবৎ কাতারে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাবু বাবার বাড়িতে সৎ মায়ের সঙ্গে থাকেন। বর্তমানে সে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বাবু লেখাপড়ার পাশাপাশি বেশ কিছু দিন যাবৎ অনলাইন জুয়ায় (থাই জুয়া) আসক্ত হয়ে পড়ে। এতে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। ঋণ থেকে মুক্তি পেতে টাকার জন্য সে নিজেকে নিয়ে একটি অপহরণ নাটক সাজানোর ফন্দি আটে। ঘটনার দিন গত ২৩ জানুয়ারি সে তাঁর সৎ মা স্বপ্না বেগম এবং চাচী মালেকা বেগমকে নিয়ে মার্কেট করার উদ্দেশ্যে সৈয়দপুর শহরের শেরে বাংলা সড়কের সৈয়দপুর প্লাজায় সুপার মার্কেটে আসে। এরপর সে সেখানে তাদের( সৎ মা ও চাচী) বসিয়ে রেখে গা ঢাকা দেয়। 
 বাবু স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানান, হুমায়ুন কবির বাবু  তার সৎ মা ও চাচীকে সৈয়দপুর প্লাজায় বসিয়ে রেখে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে নীলফামারীতে চলে যান। এরপর সেখানে রেলওয়ে স্টেশনে নীলফামারী সদরের চাঁদেরহাটের মাহাবুব রহমানের ছেলে জনৈক হাবিুবর রহমানের (৩০) সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর তাকে সে তার  পূর্বপরিকল্পিত অপহরণ নাটক সাজানোর পরিকল্পনার কথা খুলে বলে হাবিুবরকে। অপহরণ নাটক সাজিয়ে যে টাকা পয়সা আসবে তারা দু’জনে সমানভাগে ভাগ করে নেবে বলে সেখানে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। আর যেই কথা সেই কাজ। এরপর হাবিবুর রহমান শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বাবুকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে (বাড়িতে) তাকে বন্ধু পরিচয়ে থাকার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে হুমায়ুন কবির বাবু কাতার প্রবাসী বাবা তহিদুল ইসলামকে ইমুতে কল করে। এ সময় সে জানান সৈয়দপুর শহর থেকে অপহরণকারীরা তাকে অপহরণ করেছে। অপহরণকারীদের দাবিকৃত দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলেই কেবল তাকে ছেড়ে দেবে বলে তার বাবাকে জানান সে। আর এতে বাবার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য স্থানীয় একটি স্কুল ঘরের মধ্যে বাবু নিজের তার হাত পা রশি দিয়ে বেঁধে বাবাকে কাছে ইমুতে দেখান। এতে বাবুর বাবা ঘটনার বিষয়ে বিশ্বাস আসে।  তিনি (বাবুর বাবা) তাঁর আদরের ছেলেকে ফিরে পেতে অপহরণকারীদের দাবিকৃত দেড় লাখ টাকার মধ্যে  ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন।  এদিকে, বাবুর মা হামিদা বেগম তাঁর বড় মেয়ের তহুরা বেগমের মাধ্যমে ছোট ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে জানতে পেরে ঢাকা থেকে এসে সৈয়দপুর থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে মা হামিদা বেগম তার আগের স্বামীর কাছ থেকে  ছেলেকে অপহরণের বিষয়ে  বিস্তারিত জানতে পেরে গত ২৯ জানুয়ারি থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। 
অপরদিকে, থানায় মামলা দায়ের পর থেকে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) এস এম রাসেল পারভেজ তাঁর পুলিশ অফিসারকে নিয়ে ঘটনাটি নিয়ে গুরুত্বসহকারে তদন্তে নামেন। পরবর্তীতে পুলিশী তদন্ত ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে, বাবু বাবার বিকাশে পাঠানো টাকা নীলফামারীতে ক্যাশআউট করা হয়েছে। এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন। আর পুলিশী তৎপরতা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সাজানো অপহরণ নাটকের মুল হোতা হুমায়ুন কবির বাবু গত ৩০ জানুয়ারি  গভীর রাতে অসুস্থতার ভান করে একটি অটোরিকশায় করে নিজ বাড়িতে পৌঁছেন।
 গত বুধবার সৈয়দপুর থানা পুলিশ অপহরণ নাটকের হোতা হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে ফিরে আসার খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে পুলিশের  জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সে বাবার কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য নিজে নিজে অপহরণের নাটক সাজানোর ঘটনাটি অপকটে স্বীকার করেন।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহা আলম জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনার বিষয়ে হুমায়ুন কবির বাবু’র ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দীর জন্য তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।                                                                                                                      

24